হাসান ইমন

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ডিএনসিসি : লাল ফিতায় আটকে গেছে ৯ প্রকল্প

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র মরহুম আনিসুল হকের নেওয়া চলমান ৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। প্রতিটি প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ছে কমপক্ষে দুই বছর করে। এই মেয়াদ বাড়ার কারণ নানা অজুহাত কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিটি ধাপে ধাপে বাধায় পড়তে হয়। আর নেতৃত্ব সংকটের কারণে ফাইলগুলো লাল ফিতায় আটকে থাকছে। এছাড়া আনিসুল হকের মৃত্যুর পর নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। তবে কয়েকটি পরিকল্পনা করলেও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ধাপে ধাপে আটকে থাকছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ৯টি প্রকল্পের মধ্যে তৃতীয়টি ডিএনসিসির সড়ক উন্নয়নের জন্য এসফল্ট প্ল্যান্ট সংশ্লিষ্ট যান যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং স্থাপন প্রকল্পটি ২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুমোদন হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে দুই বছর পার হলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চতুর্থ প্রকল্পটি ঢাকা তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জুনে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষদিকে হলেও এরই মধ্যে দুটি ইউটার্ন নির্মাণ করা হয়েছে। পঞ্চমটি হলো এলইডি বাতি প্রকল্প। ঢাকা শহরকে আলোকিত করতে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া হয়েছে। শেষ হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। মেয়াদ শেষের দিকে হলেও ৪২ হাজার বাতির মধ্যে মাত্র ২ হাজার বাতি লাগানো হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ছয় নম্বরটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মার্চে নেওয়া। মেয়াদ ২০১৯ সালের জুনে। প্রকল্পটির মেয়াদ ৪ মাস বাকি থাকলেও ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের মধ্যে ৩টি মাঠ ও ২টি পার্কের উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৯৫০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ১৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকার ক্লিনারদের জন্য বহুতলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ সপ্তমটি প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেওয়া। মেয়াদ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আনিসুল হকের হাতে নেওয়া কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজার সরিয়ে মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রবাড়ীতে ৩টি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে সংস্থাটি। এরই মধ্যে ভবন তিনটি নির্মাণ হলেও আশপাশের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাইতে অনুমোদন হয়ে ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পটির অনেকাংশ কাজ শেষ হলেও ব্যবসায়ীদের কিছু দাবি থাকায় এখনো স্থানান্তর হয়নি। ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ডিএনসিসি অর্থায়ন করলেও বাস্তবায়ন করছে সেনাবহিনী। মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৭ শতাংশ। এছাড়া আনিসুল হকের হাতে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্টটি ২০১৫ সালে জুলাইতে নেওয়া। ৭৪ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। তবে প্রকল্পটি অগ্রগতি হয়েছে ৭১ শতাংশ। আর ডিএনসিসির ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাইতে নেওয়া। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটি এরই মধ্যে ৭৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে প্রত্যেকটি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে কমপক্ষে ২ বছর করে।

এছাড়া আনিসুল হক মারা যাওয়ার এক বছর পার হলেও নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেয়নি সংস্থাটি। তবে কিছু প্রকল্পের ফাইল প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ দেরি হওয়ার পেছনে নানা অজুহাত দেখিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অবহেলাই প্রধান কারণ। তারা ফাইল প্রজেক্ট তৈরি করতে দেরি করে। আর বিভিন্ন প্রকল্পগুলো নিয়ে স্ট্যাডি করে। এছাড়া যোগ্য নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। আনিসুল হক মারা যাওয়ার কারণে নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এরপর ভারপ্রাপ্ত মেয়ররা এলেও তারা সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। বিভিন্ন ফাইল গেলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রজেক্টের খুঁত বের করে। ফলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করতে বিলম্ব হয়।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, আমাদের হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনোটিতে অর্থ বরাদ্দ, আবার কোনোটির ফাইল যাচাই-বাছাই করতে দেরি হওয়া, কোনোটির জায়গা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে মূলত প্রকল্পগুলোর কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু শুরু করতে পেরেছি তাহলে দ্রুতই এর বাস্তবায়ন কাজ শেষ করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লাল ফিতা,ডিএনসিসি,প্রকল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close