শাহ্জাহান সাজু

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

ব্যাংক খাতে জালিয়াতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ

ব্যাংক খাতে জালিয়াতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বিদেশে অর্থপাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা রুখতে ১২ ধরনের তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা অধিশাখা-২ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এসব কেলেঙ্কারি ঘটেছে মূলত সরকারি ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক গ্রুপ দিয়ে শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি ঘটেছে জনতা ব্যাংকে। আরো রয়েছে বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওই তথ্য প্রকাশ করে।

সিপিডির আয়োজনে ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা কী করব’ শীর্ষক ওই সংলাপের মূল প্রবন্ধে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, গত ১০ বছরে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থারমেক্স গ্রুপ মিলে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছে। বেসিক ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্ক নিয়ে গেছে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হারিয়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এবি ব্যাংক থেকে পাচার হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চিঠিতে ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ, ব্যাংকিং খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধ নির্ণয়করণ, বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) আওতা বাড়ানো, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অগ্রগতি, আর্থিক খাতের লেনদেনে ডিজিটালাইজেশন সম্প্রসারণ এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৫-১৭ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে যেসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়, তা হলো বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধি, আর্থিক খাতের লেনদেনকে ডিজিটাল করার প্রয়াস অব্যাহত রাখা, অকৃষি খাতের সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা এবং সুপারিশসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বরাদ্দ দ্বিগুণ করা, পল্লী জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, সব ক্ষুদ্রঋণে নারীর অগ্রাধিকার প্রদান, সহজ শর্তে সময়মতো কৃষিঋণ প্রদান, বিশেষ করে বর্গাচাষির জন্য জামানতবিহীন কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা, ছোট-মাঝারি আকারের দুগ্ধ এবং পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠা ও মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আলু, শাকসবজি, তৈলবীজ, মসলা, নানা জাতের ফলমূল, ফুল, লতাপাতা গুল্ম ঔষধি ও ফসল উৎপাদনে বর্তমান প্রদত্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করে তা অব্যাহত রাখা। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, জনসংখ্যার বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানো, রফতানি আয় বৃদ্ধি, উচ্চহারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়, বাজেট প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন এবং অর্থপাচার রোধ করা, অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের পরিকল্পনা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, শিশুকল্যাণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদান বিষয়ে নিজস্ব বিধি ও রীতি অনুযায়ী কাজ করার অধিকার অব্যাহত রাখা, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা ও দারিদ্র্য বিমোচন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ব্যাংক তথা আর্থিক খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত এবং গৃহীতব্য কার্যক্রমের তথ্য চাওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ব্যাংক খাত,জালিয়াতি,অনিয়ম-দুর্নীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close