শাহ্জাহান সাজু

  ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

ফিরে দেখা ২০১৮

বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ব্যাংক খাত

বছরজুড়ে নানা ঘটনায় আলোচনায় ছিল দেশের ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, ফারমার্স ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় ছিল ব্যাংক খাত। তবে নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় বেড়ে যাওয়া এবং নতুন দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দেশের ব্যাংক খাতকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে আলোচনা-সমালোচনা মিলিয়ে এ বছর লোকমুখের প্রধান তর্ক-কিতর্ক ছিল ব্যাংক খাত নিয়ে।

বেড়েছে রেমিট্যান্স : বেশ কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্সের ধারা ইতিবাচক। চলতি বছরেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা ৫১০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৫০৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে অক্টোবরে এসেছে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশে ৪৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। সে হিসাবে চার মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই অক্টোবর রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বেড়েছে খেলাপি ঋণ : পুনঃতফসিল ও অবলোপন করে গত বছরের শেষ দিকে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমিয়ে এনেছিল দেশের ব্যাংকগুলো। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকায়। জুন শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ যুক্ত হয়েছে খেলাপির খাতায়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায়-অযোগ্য হয়ে পড়ায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাভুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকার অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ। এ ঋণ যোগ করলে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার বেশি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে দেশের ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। ছয় মাস আগে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

নতুন দুই ব্যাংক : সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক নামে দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ফারমার্স ব্যাংক। ফারমার্স ব্যাংক এক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারায় বেশির ভাগ ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। তাতে সংকটে পড়ে পুরো ব্যাংক খাত। এ সংকট চলাকালেই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা আসে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে। ব্যাংক পরিচালকরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নানাবিধ সুবিধা আদায় করে নেন। জনতা ব্যাংকে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ জালিয়াতি নিয়ে পুরো খাতই ছিল আলোচনায়।

জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংককে বাঁচাতে সরকারের নির্দেশে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক ও একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। মূলধন সহায়তা ও বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে অর্থসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পরিচালনারও দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আলোচনা,ব্যাংক খাত,ফিরে দেখা ২০১৮
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close