শাহ্জাহান সাজু

  ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

ফিরে দেখা ২০১৮

বছরজুড়ে আলোচনায় রাজস্ব আদায়ের চাপ

বছরজুড়ে রাজস্ব আদায়ের বাড়তি চাপ, রেকর্ড ই-টিআইএন নিবন্ধন, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিবন্ধনে গতি, স্বর্ণ নীতিমালা, কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দার অভিযান ছিল আলোচিত। তবে রেকর্ড করদাতা সংগ্রহ ও রাজস্ব আদায়ে সম্ভাবনার পথও দেখিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার নতুন চ্যালেঞ্জ : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এটি জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন করে (মূসক)। যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। এরপর আয়কর ও অন্য প্রত্যক্ষ করে ১ লাখ ২ হাজার ২০১ কোটি টাকা ও আমদানি-রফতানি শুল্কে ৮৩ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। আর বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এনবিআরের জন্য তার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এনবিআরের বর্তমান কাঠামোতে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ প্রায় অসম্ভব। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান দাবি করেছেন চ্যালেঞ্জ হলেও অসম্ভব নয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংশোধিত ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। যা বাজেট ঘোষণার সময় ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। যদিও এর আগে ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল সংস্থাটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর।

স্বর্ণ নীতিমালা : অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে চূড়ান্ত হয়েছে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে দেশের অনুমোদিত ডিলার (এডি) দুই বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি হবে ব্যবসায়ীদের চাহিদার সোনা বা স্বর্ণবার। যা দেশের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিবন্ধিতসহ আরো কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রকৃত স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও ডিলার আমদানি করতে পারবে প্রয়োজনীয় স্বর্ণ। অন্তত ১৫ দিন আগে চাহিদাপত্র দাখিল ও মোট মূল্যের ৫ শতাংশ জামানত দিয়ে মিলবে কাক্সিক্ষত সুযোগ। এছাড়া রফতানিতে বন্ড সুবিধাসহ বিশেষ প্রণোদনা কিংবা ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণসহ আটটি অনুচ্ছেদ, ৫৮টি উপ-অনুচ্ছেদ আছে ওই নীতিমালায়। স্বর্ণ চোরাচালান রোধ এবং স্বর্ণ আমদানিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়ায় গত ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। আর নভেস্বর স্বর্ণ শিল্পে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ও স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। যার মাধ্যমে বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।

রেকর্ড আদায়ের আয়কর মেলা : সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলায় মোট আয়কর আদায় হয় ২ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। যা ২০১৭ সালের আয়কর মেলার তুলনায় ২৫১ কোটি ৬১ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৪ টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি ১১.৩৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে আয়কর মেলায় আদায় হয়েছিল ২ হাজার ২১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকা। আয়কর মেলায় সেবা নেন ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ জন। রিটার্ন দাখিল করেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩ জন। ই-টিআইএন নেন ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এবারে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে সাত দিন, ৫৬টি জেলা শহরে চার দিন, ৩২টি উপজেলায় দুই দিন এবং ৭০টি উপজেলায় এক দিনব্যাপী মেলা হয়। মেলার পরপরই কর অফিসে ১০ দিনব্যাপী ছিল মেলার পরিবেশে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ।

৩৮ লাখ করদাতার নতুন মাইলফলক : এনবিআরে উদ্ভাবনীমূলক নানা কর্মকান্ডের মাধ্যেমে নতুন করদাতা সংগ্রহে বড় ধরনের সাফল্য অব্যাহত রেখেছে। আয়কর মেলা, বিকেন্দ্রীকরণ আয়কর মেলা ও কর সপ্তাহসহ নানা আয়োজনে করদাতাদের কাছ পেয়েছে বিপুল সাড়া। এরই মধ্যে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে। বেড়েছে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যাও। এরই মধ্যে রিটার্ন দাখিল ১৭ লাখ ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনা নিয়ে বিতর্ক : শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে বছরের মধ্যভাগে উত্তপ্ত হতে দেখা গেছে। এনবিআর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে। এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দেয়। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শক দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ স্বর্ণ (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে দাবি করা হয়। বিষয়েটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণের কোনো ধরনের হেরফের হয়নি। স্বর্ণকারের ভুলে ভাষার গন্ডগোলে ৪০ হয়ে গেছে ‘এইটটি’। ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর যেভাবে ভল্টে স্বর্ণ রেখেছিল তা সেভাবেই রয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজস্ব আদায়,চাপ,ফিরে দেখা ২০১৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close