নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

আ.লীগের ১০ বছর

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অসাধারণ সাফল্য

টানা ১০ বছরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশের গ্যাস সরবরাহ সহজতর করতে ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াও এখন আর স্বপ্ন নয়। ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।

সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। এই রোডম্যাপ অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দেশের ২৫১টি উপজেলাকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে। আরো ৫৫টি উপজেলাকে শিগগিরই পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া বাকি ১৫৪ উপজেলা ২০১৯ সালের মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই বিদ্যুতে পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করবে। বর্তমানে ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার বর্তমানে দেশে ৯৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালে যার সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি এবং বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৪৩০ মেগাওয়াট এবং এর সংযোগের সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ। এ ছাড়া ৫৩ লাখ সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে দেশের ২ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এ ছাড়া ৭ হাজার ৪৬১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দরপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি সরকার ২০ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরো ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের আগে মারাত্মক লোডশেডিং দেখেছি। আর এখন লোডশেডিং অদৃশ্য হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে ১১ হাজার ২৯৩ সার্কিট কিলোমিটার। বর্তমানে বিতরণ লাইনের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার এবং গ্রিড সাব-স্টেশন (এমভিএ) এর ক্ষমতা ৩৬,৯১২তে পৌঁছেছে।

সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে এবং বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬৪ কিলোওয়াটে পৌঁছেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ছয়টি উৎপাদন, একটি সঞ্চালন এবং পাঁচটি বিতরণ সংস্থা রয়েছে। টেকসই নবায়নযোগ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রডো) টেকসই এবং পুনঃনবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।

বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ২০০৯ সালের ১৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ২৭ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে এবং গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৩টি থেকে বেড়ে ২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। সরকার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ১৬ হাজার ৬৯৬ লাইন কিলোমিটার, দ্বিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ২৩৬ বর্গকিলোমিটার ত্রিমাত্রিক জরিপ এবং ১৯ হাজার ৪১২ লাইন কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করেছে।

বর্তমানে সরকার ১২ কেজি পর্যন্ত এলপিজির মূল্য ১৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৫০-৯০০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এলপিজি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি থেকে ১৮টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

তাছাড়া সরকার ইতোমধ্যেই মহেশখালীতে ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করেছে এবং ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস নাগাদ কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে এ ধরনের আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, যার ধারণক্ষমতা ৫০০ এমএমসিএফডি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত,আ.লীগ,সাফল্য,গ্যাস সরবরাহ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close