শাহ্জাহান সাজু

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

কৃষি ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান ৬ হাজার কোটি টাকা

২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যাংকটি লোকসান করে আসছে। ব্যাংকটি মোট ঋণের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ প্রান্তিক কৃষকদের দেওয়া হয়। তাছাড়া ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৮২ শতাংশ কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে। আর কৃষি খাতে অর্থায়ন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল বিনিয়োগ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এসব বিবেচনায় রেখে সরকারের কাছে ১২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয়কর অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছে বিশেষায়িত ব্যাংকটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি কৃষি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক শেখ মাহমুদ কামাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও (বিকেবি) কর অব্যাহতি সুবিধা চেয়েছে।

কৃষি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (কর বছর ২০১৫-১৬) আয়কর বিভাগ ১২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয়কর নির্ধারণ করেছে। এ থেকে কৃষি ব্যাংককে অব্যাহতি দেওয়া হোক। আবেদনের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আয়কর অব্যাহতি পাওয়ার আইনগত ভিত্তি আছে। প্রচলিত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৮২সি (৪) ধারা অনুযায়ী, লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যূনতম কর টার্নওভার (ট্যাক্স) পরিশোধ করতে হয়। সেক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকেরও কোনো মুনাফা হয় না। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ব্যাংকটি লোকসান করে আসছে।

এতে বলা হয়েছে, কৃষি ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রাজস্ব আহরণে পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে। এ অবস্থায় বিকেবি কর্তৃক আয়কর অব্যাহতির দাবি বিবেচনার জন্য পেশ করা যেতে পারে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণ মওকুফ করায় ব্যাংকটির পক্ষে মুনাফা করা সম্ভব হয়নি।

আবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্ষন্ত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিকেবির চার্টার অনুসারে মোট ঋণের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ প্রান্তিক কৃষকদের দেওয়া হয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৮২ শতাংশ কৃষি খাতে দেওয়া হয়েছে। কৃষিঋণের সুদের হার ৪ থেকে ৯ শতাংশের বিপরীতে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। কৃষি খাতে অর্থায়ন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল বিনিয়োগ, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে, বিশেষ করে অকাল বন্যা, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সিডর, আইলাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না।

এদিকে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়কর অব্যাহতির বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে আয়কর-সংক্রান্ত দ্বিতীয় আপিল মামলা চলছে। আপিল মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনার জন্য পেশ করা যেতে পারে। বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নিরীক্ষিত স্থিতিপত্র অনুযায়ী ২১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা লোকসান দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়। পরে উপকর কমিশনার কর নির্ধারণী আদেশে মোট ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয়কর ধার্য করেন। পরে করাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। প্রথম আপিল আদেশ অনুযায়ী সংশোধিত করাদেশেও মোট ১২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয়কর ধার্য করা হয়। ওই আপিল আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় আপিলও করা হয়েছে, যা চলমান।

গত জানুয়ারি মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক সার্কুলারের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের আয়ের ওপর আরোপিত আয়কর, সুপার ট্যাক্স ও ব্যবসায়িক মুনাফা আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত কর আওতার বাইরে রেখেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান, যা দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের আর্থিক কর্মকান্ডে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এই অবস্থায় কৃষি ব্যাংককেও আয়কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া যৌক্তিক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লোকসান,কৃষি ব্যাংক,আয়কর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close