নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

দেনা পরিশোধ ও পাট ক্রয়

১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বিজেএমসি

দেনা পরিশোধ এবং চলতি মৌসুমে কাঁচা পাট কেনার জন্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। সম্প্রতি সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চলতি অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে পাট কেনার জন্য উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর জন্য কাঁচা পাট কিনতে আবর্তক তহবিল হিসেবে এই ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

সূত্র জানায়, এক বছর আগে বিজেএমসিকে স্বাবলম্বী করতে মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মজুরি ও বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং মিলগুলোতে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি বজায় রাখতে বিজেএমসিকে ১ হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বিজেএমসির অধীনে পরিচালিত হয়। যার মধ্যে ঢাকায় ৭টি, চট্টগ্রামে ১০টি এবং খুলনায় ৯টি। এগুলোর মধ্যে একটি নন-জুট মিল ছাড়া বাকিগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠান। এসব পাটকলে কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ১৬৫ জন।

জানা গেছে, কাঁচা পাটের অভাবে দেশের সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান। বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় মিল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে বলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এরই মধ্যে পাটের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। নতুন বছরের পাট ক্রয় কার্যক্রম শুরু করার জন্য মিলগুলো মিলঘাটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাট ক্রয় কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মৌসুমে পাট কিনতে না পারলে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজেএমসির কাছে পাটকলগুলোর ৪৯৫ কোটি ৫ লাখ টাকা বকেয়া আছে। তাই এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে নতুন কাঁচা পাট কেনাও সম্ভব নয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মিলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাট মজুদ করা হয় না। ফলে অলস মজুরি পরিশোধ করতেই বরাদ্দ শেষ হয়ে যায়। তাই মৌসুমের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পাট কিনতে ও মিলের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিজেএমসির চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে কাঁচা পাটের মজুদ রয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪১ কুইন্টাল। এই পরিমাণ কাঁচা পাট দিয়ে মিলগুলো সর্বোচ্চ ১৫ দিন চালু রাখা যাবে। মান ও গ্রেডভেদে পাট মজুদ না থাকায় এরই মধ্যে কয়েকটি মিলের উৎপাদন কমে গেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মিলগুলোর দৈনিক গড় উৎপাদন ছিল ৪৭১ দশমিক ২৪ টন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে মিলগুলোর দৈনিক গড় উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৪৭ দশমিক ৭২ টন।

মিলগুলোর বাজেট উৎপাদন প্রতিদিন ৬২৩ দশমিক ২২ টন। পাট ক্রয় কার্যক্রম পুরোদমে শুরু না করতে পারলে শিগগির মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। মিলগুলোর প্রয়োজন (ব্যাচ) অনুযায়ী পাটের মজুদ না থাকায় শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে মজুরি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থা অবসানের জন্য নতুন মৌসুমে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বকেয়া মজুরিসহ বিজেএমসির বর্তমান দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাট ক্রয়,দেনা পরিশোধ,বিজেএমসি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close