নিজস্ব প্রতিবেদক
খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ
নিলামে ক্রিসেন্টের সম্পদ
খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ে বন্ধকি সম্পদ বিক্রির জন্য নিলাম ডেকেছে জনতা ব্যাংক। নিলামকৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাড়ে ১৬ শতাংশ প্লট, সাভার ও হাজারীবাগের জমি, যন্ত্রপাতিসহ কারখানা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। গত রোববার জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখার মহাব্যবস্থাপক এই নিলাম ডেকেছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আগ্রহীদের নিলামে অংশ নিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরের প্রতিষ্ঠান চারটি হলো— ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, লেক্সকো লিমিটেড ও রূপালী কম্পোজিট লেদার। এর মধ্যে রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র পরিচালক আবদুল আজিজ। তিনি জাজ মাল্টিমিডিয়ার মালিক।
জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ করপোরেট শাখায় গ্রাহক বলতে ক্রিসেন্ট গ্রুপ একাই। গ্লোরি এগ্রো ছাড়া ক্রিসেন্টের অপর পাঁচ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়েই নিলাম ডেকেছে জনতা ব্যাংক। নিলামের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রিমেক্স ফুটওয়্যারের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের ৮৬৪ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের ১৭০ কেটি টাকা, লেক্সকো লিমিটেডের ৪৩০ কোটি টাকা এবং রূপালী কম্পোজিট লেদারের ৮৮৮ কোটি টাকা।
জানা যায়, দেশের বাইরে পণ্য রফতানি করলেও প্রায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ফেরত আনছে না গ্রুপটি। ফলে ব্যাংকের বড় অঙ্কের টাকা আটকে গেছে। আবার সরকার থেকেও প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা নগদ রফতানি প্রণোদনা নিয়েছে গ্রুপটি। সব মিলিয়ে ব্যাংক, সরকারি কোষাগার ও দেশের বাইরে আটকে রাখা টাকার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, চামড়া খাতের কোম্পানি ক্রিসেন্ট লেদারের রফতানির টাকা দেশে না এলেও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক বিল কিনেছে জনতা ব্যাংক। এই কায়দায় জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা তুলেছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ। এ ঘটনায় জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার ৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও শাখার বৈদেশিক ব্যবসার লাইসেন্স (এডি লাইসেন্স) স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অধিকতর তদন্তও হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রিসেন্ট গ্রুপের এই ঋণ কেলেঙ্কারির বড় অংশই হয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের মাধ্যমে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজের বড় ভাই এম এ কাদের ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস, ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ, ক্রিসেন্ট ফুটওয়্যার, রূপালী কম্পোজিট লেদার, লেক্সকো লিমিটেড ও গ্লোরি এগ্রোর কর্ণধার। সব প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলা হয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপের নামে। চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায় এই দুই ভাই এম এ কাদের ও এম এ আজিজ ২০১৩ সাল-পরবর্তী পাঁচ বছরে জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে পণ্য রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা তহবিল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।
এদিকে রিমেক্স ফুটওয়্যারের দায়দেনার একটি হিসাব উল্লেখ করে তা পরিশোধের জন্য আব্দুল আজিজকে চিঠি দিয়েছিল জনতা ব্যাংক। সেখানে দেখা যায়, গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে রফতানি বিল ক্রয় বাবদ (এফডিবিপি) জনতা ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭৪ হাজার ২৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি প্যাকিং ক্রেডিট বাবদ (পিসি) ১৬৬ কোটি ৮৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ টাকা ঋণ নিয়েছে।
সাধারণত রফতানি পণ্য শিপমেন্টের জন্য এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয়। রিমেক্স ফুটওয়্যার রফতানির জন্য অগ্রিম ক্যাশ সাবসিডি হিসেবে নিয়েছে ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪২ টাকা। এ ছাড়া রফতানি বিল প্রত্যাবাসন না হওয়ায় প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ফোর্সড লোন সৃষ্টি হয়েছে। রিমেক্স ফুটওয়্যারের অন্য দায়গুলো হলো সিসি হাইপো ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭০ টাকা, সিসি প্লেজ ১০৮ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার ৮৬৪ টাকা, আইএফডিবিসি ৭১ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং এলসি বাবদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রিমেক্স ফুটওয়্যারের কাছে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার ৬২৩ টাকা।
এম এ আজিজকে দেওয়া চিঠিতে ব্যাংকের সব দায় পরিশোধের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল। রিমেক্স ফুটওয়্যার নির্ধারিত সময়ে জনতা ব্যাংকের পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ১২ ধারার বিধান মোতাবেক ঋণের বিপরীতে বন্ধকি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
পিডিএসও/তাজ