শাহজাহান সাজু
অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক
বিনিয়োগ প্রস্তাবে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) অর্থাৎ তৃতীয় প্রান্তিকে ৪০৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩০ হাজার ৫২১ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে।
বিনিয়োগ প্রস্তাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসব প্রস্তাবের মধ্যে ৩৭৩টি এসেছে দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে। এছাড়া ১৫টি শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ২০টি দেশ-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। নিবন্ধিত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে টেক্সটাইল শিল্প খাত থেকে। মোট প্রস্তাবনার ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশই টেক্সটাইল খাতের। এছাড়া সেবা খাতে ২১ শতাংশ, রাসায়নিক শিল্প খাতে ২০ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প খাতে ৯ শতাংশ, ট্যানারি ও লেদার খাতে এক শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া অন্যান্য শিল্প খাতে এসেছে ২১ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সারা দেশে ৬৪ হাজার ৮৪৩টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে বিডা।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিডার নতুনভাবে নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও তাদের প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দুইটিই বেড়েছিল। জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ সময়ে বিডাতে ৯২টি প্রতিষ্ঠান বেশি নিবন্ধিত হয়। আর বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছিল ১২ হাজার ৮৭৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বা ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ সংবলিত মোট ৪৩টি নিবন্ধিত শিল্প ইউনিটের বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছিল ২১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪৮৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে, যাদের প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের আকার ছিল ৮২ হাজার ৬৪০ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিবন্ধিত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ছিল ৩৯১টি। আর তাদের প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার ৭৬৬ কোটি ১৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে সম্পূর্ণ স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত হয়েছিল ৪৪০টি শিল্প ইউনিট। তাদের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ হাজার ১০৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে নিবন্ধিত ৩৬১টি শিল্প ইউনিটের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৬২৭ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ হিসাবে আগের প্রান্তিকের চেয়ে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছিল ৪৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর বছরওয়ারি হিসাবে (২০১৬ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায়) সম্পূর্ণ স্থানীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছিল ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিআইডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ২২টি শতভাগ বিদেশি ও ২১টি যৌথ বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত শিল্পে অর্থাৎ বৈদেশিক বিনিয়োগ সংবলিত মোট ৪৩টি নিবন্ধিত শিল্প ইউনিটের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৭৩ হাজার টাকা। আগের প্রান্তিকে বৈদেশিক বিনিয়োগ সংবলিত মোট ৩০টি নিবন্ধিত শিল্পের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ১৩৮ কোটি ৪৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এ হিসাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাব বেড়েছিল ২১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আলোচ্য তিন মাসে স্থানীয় ও বৈদেশিক মিলিয়ে কেমিক্যাল খাতে সর্বাধিক বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া যায়, যা মোট বিনিয়োগের ৬৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া পর্যায়ক্রমিকভাবে টেক্সটাইল শিল্পে ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সেবা খাতে ৯ দশমিক ৩২, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে ৪ দশমিক ২৬, কৃষি শিল্পে দশমিক শূন্য ৮২ শতাংশ ও অন্যান্য শিল্প খাতে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, আগের প্রান্তিকেও স্থানীয় ও বৈদেশিক মিলিয়ে কেমিক্যাল খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছিল, যা ছিল মোট বিনিয়োগের ৩৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সেবা খাতে ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ৮ দশমিক ১৮, কৃষি খাতে ৪ দশমিক ১১, টেক্সটাইল খাতে ১ দশমিক ৩১, বিবিধ শিল্প খাতে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ ও অন্যান্য শিল্প খাতে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছিল।
জানা যায়, বিনিয়োগ প্রস্তাবের সূচক গত কয়েক অর্থবছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এপ্রিল-জুনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব ৮ হাজার ১৯১ কোটি ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা কমলেও জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা ৪০ হাজার ৭৪০ কোটি ৫২ লাখ ৭১ হাজার টাকা বেড়েছিল। আর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বিনিয়োগ প্রস্তাব বাড়ে ১২ হাজার ৮৭৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ জিডিপির ২১ থেকে ২৩ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে মাঝে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তাতে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। আলোচ্য সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগ দাঁড়ায় জিডিপির ২৩ শতাংশে। পরবর্তী ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও একই অবস্থা। আর এর আগের তিন অর্থবছরে এটি ছিল ২১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিনিয়োগ জিডিপির ২৮ শতাংশের আশপাশে। অথচ সরকারের কাক্সিক্ষত ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা দরকার।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে বলেছেন, ‘বিনিয়োগ সহায়ক অবকাঠামো সৃজন, জ্বালানি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন, শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও সহায়তা প্রদান এবং বিধি-বিধান ও আইন-কানুন সহজীকরণ সত্ত্বেও বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বেসরকারি বিনিয়োগের হার আশানুরূপ হারে না বাড়ার বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছি; প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।’
পিডিএসও/হেলাল