শাহ্জাহান সাজু

  ০৭ জুন, ২০১৮

আজ টানা দশমবারের মতো উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

জনতুষ্টির বাজেট

নতুন অর্থবছরের জন্য বড় ব্যয়ের জনস্বস্তির বাজেট নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই বাজেটের মাধ্যমে তিনি সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ দেশের জনগণকে সন্তুষ্ট করার প্রয়াস নিয়েছেন। সেজন্য তিনি আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন—এবারের বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যেমন চালু করা হচ্ছে গৃহনির্মাণ ঋণ কর্মসূচি; তেমনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য থাকছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার রূপরেখা।

আজ জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে দুপুর সাড়ে ১২টায় অর্থমন্ত্রী এই বাজেট পেশ করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৬৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বেশি। আর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এর আকার ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটের আকার ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চালু করা হচ্ছে গৃহনির্মাণ ঋণ কর্মসূচি। এ খাতে প্রথমবারের মতো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে গৃহনির্মাণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ১৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এই সুবিধা বেতন-ভাতার বাইরে অতিরিক্ত বরাদ্দ। পাশাপাশি বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বাজেটে থাকছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার রূপরেখা। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের পেনশনভোগীদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) অধীনে পৃথক পেনশন অফিস গড়ে তোলার ঘোষণা থাকছে।

দেশে বর্তমান প্রায় ৯ লাখ পেনশনভোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বছরে তাদের ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) ৫ শতাংশ হারেই হবে। এমনকি অর্থমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির রূপরেখা দেওয়া হবে বলেও জানান। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ৫২ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা রাখা হয়। কিন্তু আসন্ন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৬ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

জানা যায়, নতুন করে আরো ১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি (সরকারি বেতনের অংশ) করা হচ্ছে। এজন্য আসছে বাজেটে বাড়তি প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু শর্তজুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় রয়েছে।

আসছে বাজেটে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা খাত নামে নতুন একটি খাত। তাদের পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প এরই মধ্যে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরসহ অবকাঠামো তৈরিতে বাজেটে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আসছে বাজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মাননা ভাতা দেওয়ার ঘোষণা থাকছে। বিশেষ সম্মাননা ভাতা বাবদ বিজয় দিবস ভাতা নামে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বছরে এককালীন ৫ হাজার টাকা পাবেন। প্রায় ২ লাখ জীবিত মুক্তিযোদ্ধার জন্য বিশেষ এই সম্মাননা ভাতা চালুর ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৪৩ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর ৬ মাসের মেয়াদে স্বাস্থ্য, জনসেবা ও পুষ্টি খাতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আরো ১০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর ঘোষণা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর থেকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা, এনবিআরবহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে যা কমিয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটিতে নামানো হয়েছে। মূল বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

আসন্ন বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক অনুদান থেকে ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে তা সামান্য কমিয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ৪১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। আসন্ন বাজেটের এই ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। তাছাড়া বিবিধ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছিল ২২ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পেশ হতে যাওয়া বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

একইভাবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ায় তা সংশোধিত বাজেটে কিছুটা বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়। তবে নতুন অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজেট ২০১৮-১৯,অর্থমন্ত্রী,সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist