তরুণ উদ্যোক্তা
শত বাধাঁ পেরিয়ে এগিয়ে চলা এক তরুণী
এক সময় উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখাটা বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল। আজো সেটা কষ্টেরই! কিন্তু প্রেক্ষাপটটা পাল্টিয়েছে। আজ ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণী থেকেই উদ্যোক্তা হবার গল্প জানছে, পুথিঁগতভাবে জানছে উদ্যোক্তা হবার সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতাগুলো। তাছাড়াও উদ্যোক্তা বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন শাখায় স্নাতকোত্তর কোর্সের মাধ্যমেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অবারিত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এসব কোর্স ছাড়াই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ার স্বপ্ন বুনে চলেছেন। তেমনি একটি অনলাইন ব্যবসায়ের উদ্যোক্তা হলেন প্রেমা নবী। তার স্বপ্নের ব্যবসায়ের নাম শপিং গ্লোরিস্ট।
পরিবার থেকে ব্যবসায়ে জন্য তাগিদ দেয়া হলেও তখন মাথায় নেন নি, কিন্তু মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করার চেয়ে অনলাইনে নিজের অধিকাংশ কেনাকাটা সেরে নেবার আগ্রহ থেকেই চিন্তা আসে অনলাইন বিজনেস করার। কিন্তু ব্যবসা শুরু করার জন্য কোন প্রকার পূর্ব প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়ে যান প্রেমা নবী। তবেএকটি ইতিবাচক দিক হলো তিনি একা ব্যবসা শুরু করার আগে অনেকের সাথে কাজ করেছেন।
কিন্তু ওসব জায়গায় পুরো ব্যাপারটি নিজেকে দেখভাল করতে হয়নি, শুধুমাত্র অর্পিত দায়িত্বটুকু সম্পন্ন করলেই হতো। তবু একটা অজানা স্বপ্ন বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে একাই নেমে পড়েন অনলাইন বিজনেসে। মাথায় সবসময় ভাবনা ছিল, ব্যবসাটি যেহেতু নিজের, সেহেতু ঝুঁকিটা নিজেকেই নিতে হবে।
বহুজাতিক কোম্পানীর বিপনন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ স্বামী রাশেদুন নবী’র পরামর্শে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ‘শপিং গ্লোরিস্ট’ নামে একটি গ্রুপ ও পেজ খুলে শুরু করেন থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সৌখিন পন্য এনে অনলাইন ব্যবসা। ধীরে ধীরে নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে ফেসবুকে ‘শপিং গ্লোরিস্ট’ নামে গ্রুপ ও পেজ চালানোর মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে শুরু করেন কার্যকর যোগাযোগ।
‘শপিং গ্লোরিস্ট’ নাম দেয়ার পেছনের প্রেক্ষাপট হিসেবে এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, আমার মাথায় সবসময় ঘুরতো, মেয়েরা খুব শপিং বা কেনাকাটা করতে ভালোবাসে, সেজন্য শপিং। আর সেই সাথে গ্লোরিস্ট নাম দেয়ার কারণ হলো, আমারা সবাই যেন কেনাকাটার করার সময় মনে আনন্দ ও প্রশান্তির ভাব নিয়ে কোনো কিছু কিনতে পারি, এজন্যই সব মিলিয়িই শপিং গ্লোরিস্ট।
প্রেমা নবী জানান, একজন বিবাহিত নারী হিসেবে সংসার সামলিয়ে, গত এক বছরে এ ব্যবসার হাল ধরে রাখার জন্য, তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি নিজে একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। কিন্তু গত একবছর ব্যবসার প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যেতে পারেন নি।
একদিকে সংসার, অন্যদিকে গ্রুপ ও পেইজে ক্লায়েন্টেদের রিপ্লাই দিয়ে ব্যবসায়ের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ভার। তবু হাল ছেড়ে দেন নি। স্বামীর কৌশলগত পরামর্শ আর নিজের ধৈর্য নিয়ে গত এক বছর ধরে চালিয়ে আসছেন এই অনলাইন ব্যবসাটি। ধৈর্য আর ক্রমাগত লেগে থাকার কারণে ফেসবুক গ্রুপে গত ৯ মাসে শপিং গ্লোরিস্ট এর সদস্য সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লক্ষ। আর পেজটিতে লাইকের সংখ্যা ৩২ হাজার।
গ্রাহকদের উৎসাহব্যঞ্জক অনুভূতি আর সৃজনশীল ভাবনা প্রেমা নবীকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে; আর এ সবকিছু নিয়েই আরো সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এই গ্রুপ ও পেইজের মাধ্যমে ব্যবসাটা এগিয়ে নিতে, আমি অনেক কিছু ত্যাগ করেছি, রাত জেগে আমি ক্লায়েন্টের প্রশ্নের রিপ্লাই করেছি, যেন কোনো ক্লায়েন্ট অসন্তুষ্ট না হয়। তিনি বিশ্বাস করেন, আমার এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। আমাকে আরো নতুন অনেক কিছু শিখতে হবে। আমার কাছে কখনই মনে হয় না, শেখার কোনো বয়স আছে! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ শিখে যায়। আমি ও শিখব।
প্রেমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি অনেক দূর এগিয়ে যাবেন। তিনি কোনো কাজ তাড়াহুড়ো করা কোনোদিন পছন্দ করেন না। পণ্যের গুণগত মান নিয়ে, তাঁর কোন আপোস নেই। তাঁর কাছে ক্রেতার সন্তুষ্টি অনেক বেশী মূল্যবান। তাঁর বিশ্বাস, তাঁর এই নীতি তাঁকে একদিন অনেক দূর নিয়ে যাবে। তাঁর ভালো লাগে যখন কেউ দেখে বলে, আপু আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে এবং অবাক হন, যখন দেখেন তিনিও কারো কারো কাছে এতোটা একজন সফল মানুষ! তিনি চেষ্টা করেন, কেউ কোনো সহযোগিতা চাইলে সেটি করার।
সব মিলিয়ে, সৌখিন এই পণ্যগুলো আরো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া আর বিপনন কাজের প্রসারের মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও এখন তাঁর কাছে মূখ্য বলে জানান ‘শপিং গ্লোরিস্ট’ এর স্বত্তাধিকারী প্রেমা নবী।-সুমিত বণিক, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, ঢাকা।
পিডিএসও/মুস্তাফিজ