বছরে যানজটের ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা : বুয়েটের গবেষণা
ঢাকা মহানগরীতে যানজটে প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় বলে ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক হিসাব দেখিয়েছিল; এক বছর পর বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই অঙ্কটি ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। এই যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা দেখিয়েছে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, যা জাতীয় বাজেটের ১১ ভাগের ১ ভাগ।
শনিবার বুয়েটে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।ওই গোলটেবিলে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে যানজটের কারণে সময় নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে।
প্রতিবেদনে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স দিতে আরো বেশি সতর্ক হওয়া, নগরে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা, বাইসাইকেল লেন ও হাঁটার পথ তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গোলটেবিলে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, ঢাকায় যানজটের কারণে পিক আওয়ারে গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটে প্রতি বছর ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
ঢাকা শহরে গণপরিবহনগুলো প্রতিদিন ৩৬ লাখ ট্রিপে ৩৫ শতাংশ যাত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
যানজটের প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, যানজটের কারণে মানব চরিত্রের ৯টি দিক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগে প্রভাব পড়ছে। গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে তার প্রতিবেদনে।
নগরের যানবাহন পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দেন অধ্যাপক মোয়াজ্জেম। এখন ঢাকায় ১৫০ থেকে ২০০ বাস সার্ভিস চলছে। এটাকে প্রতিটি রুটে একটি করে কোম্পানিকে দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। এতে করে সড়কে প্রতিযোগিতা কমবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো সম্পূর্ণভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শও দেন তিনি। তিনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ, সিসিএস, রাজউক, আরএইডি, এলজিইডি, বিআরটিএর মধ্যে একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
পরিবহন খাতে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন, বছরে ১ হাজার কোটি টাকা সাবসিডিয়ারি দিয়ে বছরে যদি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করতে পারি তবে সেখানে সাবসিডিয়ারি দিলে ক্ষতি কোথায়?
এলিভেটেড টাওয়ার পার্কিং বিষয়ে আলোচনা করতে এসে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, একটি মোটামুটি উন্নত শহরের জন্য ২৫ শতাংশ ভালো সড়ক প্রয়োজন। বাংলাদেশে রয়েছে ৭.৮ শতাংশ। তিনি বলেন, এক কাঠা জমিতে এলিভেটেড টাওয়ার পার্কিং নির্মাণ করতে পারলে সেখানে ৫০টি গাড়ি পার্কিং করা যায়।
ঢাকা শহরে পর্যায়ক্রমে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে হামিদ বলেন, এগুলোর প্রতিটি নির্মাণে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তবে দাতা সংস্থা জাইকা এতে তহবিল জোগাতে ইচ্ছুক বলে জানান তিনি।
পিডিএসও/তাজ