‘বাংলাদেশের গন্তব্য নিশ্চিতভাবে সফলতার দিকেই অগ্রসরমান’
বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিষয়ক এক সেমিনারের বক্তারা। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তারা বলেন, বাংলাদেশের গন্তব্য নিশ্চিতভাবে সফলতার দিকেই অগ্রসরমান। বোস্টনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভোলপমেন্ট ‘বাংলাদেশ রাইজিং- ২০১৮’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সকালে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১’ এর সফল উৎক্ষেপনের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান বক্তারা।
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদার ও সংস্থার প্রতিনিধিরা, নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি, হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নীতি-নির্ধারক, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, থিংক ট্যাংক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ, জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি, ম্যাক্স গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং এনার্জি প্যাক বাংলাদেশ, মেঘনা গ্রুপ, আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোন।
সেমিনারে আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের চ্যার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তারেক মো. আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী, মাইক্রসফট্ বাংলাদেশ লিমিটেড’র এমডি সোনিয়া বশির কবীর, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস্’র আনিকা চৌধুরী ও গ্রিন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানির ফারজানা চৌধুরী, অ্যালায়েন্স ফর আফোর্ডেবল ইন্টারনেট’র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর সোনিয়া এন জর্জ, জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির সিইও দিপেস নন্দ, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী চার্লস ল্যাসি, সাউথ কোরিয়ার এসকে গ্যাস-এর সিনিয়র ম্যানেজার ইয়ো জিন কিম।
সেমিনারে আলোচনা, বিতর্ক, মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় ইত্যাদির মাধ্যমে উঠে আসে বাংলাদেশে উন্নয়নকে অর্থবহ ও টেকসই করার বিভিন্ন কলা-কৌশলের কথা। এছাড়া উন্নয়ন এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন কোন ক্ষেত্রে আরো সংস্কার আনতে পারে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও সংস্থাসমূহ কিভাবে বাংলাদেশকে কার্যকর সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়গুলোও উঠে আসে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়। শান্তিপূর্ণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাস্তবভিত্তিক ভূমিকার প্রতিও আলোচকরা দৃষ্টিপাত করেন।
সেমিনারকে ৬টি প্যানেলে ভাগ করা হয়। প্যানেলগুলো হলো প্রতিশ্রুত সামষ্টিক অর্থনীতি ও এর সংস্কার, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ ও এর প্রতিশ্রুতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, ব্যবসায় নারী নেতৃত্ব এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবাকে কিভাবে আরও গণমূখী করা যায়।
ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইকবাল ইউসুফ এবং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টার এর সিনিয়র ফেলো ইকবাল কাদির উপস্থিত অতিথিদের সেমিনারে স্বাগত জানান এবং সেমিনারের সূচনা করেন। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন হার্ভাডের টাফ্টস্ ফ্লেচার স্কুলের ইনস্টিটিউট ফর বিজনেজ ইন দ্যা গ্লোবাল কনটেক্স এর ফেলো নিকোলাস সুল্লিভান। তিনি সেমিনারের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন। অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় বলে অভিহিত করেন ফ্লিচার।
সেমিনারের উদ্বোধনী সেশনে কি-নোট স্পিকার ছিলেন হার্ভাড কেনেডি স্কুলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো ফ্রাঙ্ক নেফকি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কেবল ভিয়েতনাম ও চীনের সাথে তুলনা করা যায়। নেফকি বাংলাদেশের রপ্তানি, উৎপাদন সক্ষমতা বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরের বিকাশের কথা তুলে ধরেন। প্রতিশ্রুত সামষ্টিক অর্থনীতি ও এর সংস্কার বিষয়ক প্যানেলের মূল বক্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। প্যানেলে আরো ছিলেন সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জামালউদ্দিন আহমেদ। মডারেটর ছিলেন আইএফসির প্রতিনিধি মিরা নারায়নাস্বামী।
ড. মশিউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন উন্নয়ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি বিষয়ে কি-নোট বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোই সফলতা নয়, সফলতা হল উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা। আমরা প্রকল্প ভিত্তিক উন্নয়নে বিশ্বাসী নই আমরা জনগণভিত্তিক উন্নয়নে বিশ্বাসী।
ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টের উপর কী-নোট বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের মুখ্য সমন্বয়ক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। প্যানেলের অন্যতম প্যানেলিস্ট ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।
পিডিএসও/মুস্তাফিজ