হালদা থেকে সাড়ে ২২ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ
উৎসবের আমেজে অন্যান্য বছরের মতো এবারও চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পেশাদার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, হালদা নদীতে এবার মা মাছের ছাড়া ডিমের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ডিম সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এই হিসেবে এবার রেণু মিলবে প্রায় ৩৭৮ কেজি। তিনি আরও বলেন ৪০৫টি নৌকা নদীতে ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। সব নৌকা এখনও ফেরেনি। পূর্ণাঙ্গ হিসেবে রেণুর পরিমাণ আরও কিছু বেশি হতে পারে; যা খুবই আশাব্যজ্ঞক। দূষণ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে হালদায় মা মাছের ডিম উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়ায় জেলেরাও এবার খুব খুশি।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ১২ মে, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল, ২০১৬ সালে ১৯ মে এবং ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল হালদায় ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সরকারি হিসাবে ২০১২ সালে নদী থেকে সংগৃহ করা ডিমে রেণু হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি। ২০১৩ সালে তা কমে ৬২৪ কেজি এবং ২০১৪ সালে আরও কমে মাত্র ৫০০ কেজিতে দাঁড়ায়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার পর থেকে মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে। এর আগে বুধবার হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। ডিম সংগ্রহকারী হালদা পাড়ের জেলে ও স্থানীয়রা বলছেন, গত ৪-৫ বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই হালদায় ডিমের পরিমাণ ক্রমাগত কমছিল। পুরোদমে ডিম দেয়ার আগে বুধবার মা মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ার পর প্রস্তুতি নিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন জেলেরা। এজন্য বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের গড়দুয়ারা, আজিমের ঘোনা, অঙ্কুরিয়া ঘোনা, কাগতিয়া, নাপিতের ঘোনা, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ডিম সংগ্রহ শুরু করেন তারা। সেই কাজ শেষ হয় শুক্রবার দুপুরে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, গতবার ডিম সংগ্রহ হয়েছিল ১ হাজার ৬৮০ কেজি। আর ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, আমার ৬টি নৌকা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম সংগ্রহ করেছে। ৫ বছরের মধ্যে এবার ডিমের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া হাটাহাজারী উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা কাজী আবুল কালাম বলেন, ডিম থেকে রেণু হলে ১০ দিন পর পূর্ণাঙ্গ হিসাব তারা জানাতে পারবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিবেশ এবার আগের চেয়ে ভালো। সেই ফলই এবার পাওয়া গেছে। ডলফিন ও মাছ রক্ষায় ড্রেজার চলাচল এবং বালি উত্তোলন বন্ধ করা, পিকেএসএফ ও আইডিএফের তত্ত্বাবধানে স্পিডবোটের মাধ্যমে নিয়মিত পাহারা দেওয়া, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি, চোরা শিকার কমা এবং ভুজপুর ড্যাম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পানির উপযুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করার কারণেই এবার বেশি ডিম পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। হালদাকে দূষণের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হলে আবার আগের মত ডিম পাওয়া যাবে বলে মনে করেন কিবরিয়া।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে পূর্ণিমা-অমাবস্যা তিথিতে পাহাড়ি ঢলের পানির সঙ্গে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হলে এবং নদীর পানির তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে মা মাছ ডিম দেয়। হালদায় মূলত রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউশ জাতীয় মাছ ডিম দেয়। মা মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ার পর তা সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রস্তুত জেলেরা। মা মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ার পর তা সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রস্তুত জেলেরা। কিন্তু চোরা শিকারিদের উৎপাত আর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলাজুড়ে থাকা এই নদীতে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। ফলে ডিম উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছিল।পিডিএসও/মুস্তাফিজ