নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ এপ্রিল, ২০১৮

অর্থবছরের প্রথম আট মাস

বাণিজ্য ঘাটতি ৯৭ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার । যা টাকার অংকে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। আমদানি ব্যয় যে হারে বাড়ছে, সেই তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ার কারণেই ধারাবাহিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার দাঁড়ায়। এক মাস পর ফেব্রুয়ারিতে এ ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়েছে। তার আগে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। যা ছিল ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আট মাস শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬০৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৫৬৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার । বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতি ডলার ৮৩ টাকা হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে ৪৬ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের মতো বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। আর এসব বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এই ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এই খাতেও কিছুটা নিম্নগতি রয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি জন্য ভালো নয় বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ফেব্রুযারি শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ৪০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২০ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রতিডলার ৮৩ টাকা হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

উল্লেখিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ হারে। অন্যদিকে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ হারে। এতে চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে গেছে। প্রসঙ্গত, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার মানে হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। অন্যদিকে ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর জুড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়। যেটি বর্তমানে অব্যাহত আছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে ৬৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ২৮০ কোটি ২০ লাখ ডলার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাণিজ্য ঘাটতি,বাংলাদেশ ব্যাংক,অর্থবছর,রেমিট্যান্স
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist