শাহ্জাহান সাজু

  ২৩ মার্চ, ২০১৮

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় পরিকল্পনা সরকারের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বড় পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এজন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। এর আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দ্রুত কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে বেশকিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। বেসরকারি খাতে পেনশনের আওতা সম্প্রসারণ করা হবে। এর পাশাপাশি আরো ১৮টিরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে আগামী তিন অর্থবছরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ বেকারদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আগামী তিন অর্থবছরে উল্লিখিত পরিমাণ টাকা চাওয়া হবে দাতা সংস্থাটির কাছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিগগিরই ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা চেয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে চিঠি পাঠাবেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে ছয় হাজার কোটি টাকা চাওয়ার জন্য ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের সার-সংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, কর্মসংস্থান বাড়িয়ে বেকারত্বের বোঝা লাঘব করতে সরকার আইন-বিধি ও নীতি কৌশল সংস্কার করতে যাচ্ছে। এসব কর্মকান্ডে অন্যতম দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চাইছে সরকার। তবে বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে দাতা সংস্থার কাছে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে সরকার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আগামী তিন অর্থবছরে এই অর্থ সরবরাহের দাবি জানানো হবে। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হবে। উন্নয়ন নীতিমালা ঋণ হিসেবে এই অর্থ চেয়ে ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একটি চিঠি তৈরি করেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুমোদন সাপেক্ষে চিঠিটি বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসে পাঠানো হবে। তবে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেলে ২০টিরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতি অর্থবছরের জন্য থাকবে পৃথক পরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং হবে বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে। কর্মপরিকল্পনার আওতায় বহুমুখী কর্মসৃজন, মানসম্পন্ন চাকরির সুযোগ তৈরি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিক হারে কর্মে প্রবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। দ্রুত বহুমুখী কর্মসৃজনে তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ যৌক্তিকীকরণ ও শুল্কসুবিধার আধুনিকায়ন করা হবে। নতুন কাস্টমস আইন ও বিধি প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় একক বাতায়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও একটি সমন্বিত ও স্বয়ংক্রিয় ওয়ানস্টপ সার্ভিস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

তা ছাড়া আর্থিক নিরাপদ লেনদেনবিষয়ক আইন প্রণয়ন, স্থানান্তরযোগ্য জামানতের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি, দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে মধ্যস্থতাবিষয়ক বিধি জারি, সালিশ আইন ও অর্থঋণ আদালতের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অধিকতর এবং মানসম্মত চাকরির সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে পেনশনের আওতা সম্প্রসারণ করা হবে। সমন্বিত পেনশন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন ও সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পোশাক শিল্পে কর্মকালীন ঝুঁকিবীমা প্রবর্তনের সম্ভাব্যতা যাচাই, ফলাফলের ভিত্তিতে এ ধরনের বীমা প্রবর্তনের আইনি কাঠামো প্রণয়ন করা হবে। তা ছাড়া শ্রম আইন প্রয়োগে সক্ষমতা বৃদ্ধি, কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন অনলাইনে প্রকাশ, শ্রম আইনের আওতায় চুক্তি ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কর্মে প্রবেশ নিশ্চিত করতে অভিবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন, নারী কর্মসংস্থানের অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন সমন্বয়ের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন ও বেসরকারি খাতের অর্থায়নে শিল্প দক্ষতা কাউন্সিলগুলো কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, কর্মদক্ষতা উন্নয়নে এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে গতি আসবে। এতে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আগামী তিন অর্থবছরে ২৫ কোটি মার্কিন ডলার করে মোট ৭৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত ঋণ সহায়তা পাওয়া গেলে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়লেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবণতায় যে শ্লথ গতির প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিল, তা রোধ করা সম্ভব হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্মসংস্থান,সরকার,ঋণ সহায়তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist