রিহাব মাহমুদ
কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের হালচাল
পরিসেবা বাড়ায় রাজস্ব আয়ে উন্নতি
গোটা বিশ্বে কক্সবাজারের পরিচিতি এতদিন শুধু ছিলো দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কল্যাণে। অনেক দেশের মানুষ বাংলাদেশের নাম না জানলেও কক্সবাজারের নামটা জানে। সেই জানার পরিধি এখন শুধু আর পৃথিবীর সুন্দরতম সৈকতকে ঘিরে শুধু নয়। বরং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভিনদেশ থেকে সরাসরি বিমানযোগে সেই সৈকত দেখতে আসতে পারার অন্যতম উপায় কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর স্থাপনের উদ্যোগ। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়। যেদিন বিভিন্ন দেশের মানুষ সরাসরি আসবে কক্সবাজারে। কিন্তু এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশের ভিভিআইপি, ভিআইপিদের অনেকে সরাসরি বিমানযোগে অবতরণ করেছেন কক্সবাজার বিমান বন্দরে। আর এতে করে কক্সবাজার বিমান বন্দরে বেড়েছে যাত্রী পরিসেবাও।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের বিমান ও প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের ২৪টি ফ্লাইট ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন চলাচল করছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব আয়ও বেড়েছে তিনগুন।
জানা গেছে, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানে উন্নীতকরণে বিমান বন্দর সম্প্রসারণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান এই সম্প্রসারণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
গত বছরের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোয়িং ৭৩৭ বিমান যোগে কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন এবং কক্সবাজার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরের শুভ উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে আর্ন্তজাতিক বিমান ও উড়োজাহাজ উঠা-নামা করছে কক্সবাজার বিমান বন্দরে। বিশেষ করে গত বছরের ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকটের পর বিভিন্ন দেশের ভিভিআইপি, ভিআইপিদের অনেকে সরাসরি কক্সবাজার বন্দর থেকে উঠা নামা করেছে। পরিসেবার পাশাপাশি বিমান বন্দরে নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ দেশি নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরা।
বিমান ও উড়োজাহাজ যোগে বিশেষ করে ইয়াবা পাচার রোধে হার্ড লাইনে রয়েছে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে নিরাপত্তাকর্মীরা সার্চ ও পৃথক অভিযান চালিয়ে গত আড়াই বছরে ২ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। যার মুল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এসময় যাত্রীবেশি নারী ও পুরুষ সহ ৫০ জন ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করে।
আরো জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরাসরি কক্সবাজার বিমান বন্দর হতে যাতায়াত করেছে তুরস্কের ফাস্ট লেডি, তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী, জর্ডানের রাণী, মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ১২টি দেশের নৌ বাহিনী প্রধানসহ অনেক দেশের ভিভিআইপি ও ভিআইপি লোকজন সরাসরি এই বিমান বন্দর দিয়ে যাতায়ত করেছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই বিমান বন্দর হতে সপ্তাহে চলাচল করতো ১০টি ফ্লাইট। ২০১৬ সালে এর সংখ্যা দাড়ায় ১২টিতে। ২০১৭ সাল থেকে দৈনিক ১৬টি ফ্লাইট যাতায়ত করলেও বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ও প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর ৮টি কার্গোসহ ২৪টি বিমান ও উড়োজাহাজ ফ্লাইট প্রতিদিন নিয়মিত যাতায়ত করছে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা, বিমান বন্দরে নিয়মশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, পরিচ্ছন্নতা বেড়েছে বহুগুন। পাশাপাশি বেড়েছে রাজস্ব আয় সহ যাত্রী পরিষেবার মান।
দেশিয় একজন পর্যটক জানালেন, বিমান বন্দরের নিরাপত্তা মুলক ব্যবস্থা খুবই ভালো। এখানকার দায়িত্বরতদের সেবা নিয়ে আমি অত্যন্ত সন্তোষ্ট।
কক্সবাজার চেম্বার এন্ড কমার্স ইন্ড্রাষ্ট্রি সদস্য ও মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, আগামীতে সরকার ও সিভিল এভিয়েশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটগুলো প্রতিদিনই অবতরণের সম্ভাবনা রয়েছে। যাত্রী বিমান সরাসরি আসা যাওয়া করলে কক্সবাজার পর্যটনের সমৃদ্ধি তথা বহিবিশ্বের সাথে ব্যবসায়ীক সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কক্সবাজার বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত বলেন, কক্সবাজার বিমান বন্দরের ২০১৫ সালের পূর্বে বিমান, উড়োজাহাজ অবতরণ, পাকিং, যাত্রী বর্হিগমন ফি সহ অন্যান্য খাতে বছর রাজস্ব আয় হতো ৮০ লাখ টাকা। বর্তমানে এই আয় বেড়ে দাড়িয়েছে পৌনে দুই কোটি টাকায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণ ও যাত্রী পরিসেবা বৃদ্ধি করায় এটা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।