নিজস্ব প্রতিবেদক
রিকশায় সয়লাব ঢাকা
রিকশায় সয়লাব ঢাকা। অলিতে-গলিতে, মহাসড়কে, ভিআইপি রোডে সবখানে শুধু রিকশা আর রিকশা। এখন সাধারণ রিকশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। সবই অবৈধ। রিকশার নৈরাজ্যে বিশৃঙ্খল, অনিরাপদ ও গতিহীন হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। এর ফলে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজটকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। রিকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য এর আগে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (ডিটিসিবি) বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও রাজনৈতিক কারণে সফল হতে পারেনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের এক জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টির। বাকি সব অবৈধ। মূলত যানজট নিরসনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, পুরো রাজধানীতে ৮০ হাজার ৪৭৩টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৫২ হাজার ৭৫৩ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ২৬ হাজার ৭২০টি রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্সধারী রিকশাগুলোর প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন করাতে হয়। এ জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রিকশাপ্রতি ১০০ টাকা নবায়ন ফি দিতে হয়। এর বাইরে রিকশার সঠিক সংখ্যার তথ্য কারো কাছেই নেই। তবে পুলিশ, রিকশা মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও সিটি করপোরেশনের মতে, রাজধানীতে এ ধরনের অবৈধ রিকশার সংখ্যা ছয় লাখের মতো।
রাজধানীতে এখন আর নতুন করে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয় না। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠনের নামে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ রিকশা চলছে। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা এসব রিকশা সংগঠন পরিচালনা করে থাকেন। এদের চাপের কারণে নগরী থেকে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে রিকশা বন্ধ করা যায়নি। বরং প্রতিদিনই রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। যেহেতু রাজধানীতে রিকশা চলাচল বন্ধ করা যায়নি, তাই সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিলে বরং সরকারের রাজস্ব বাড়ত। ছয় লাখ রিকশার লাইসেন্স সিটি করপোরেশন দিলে প্রতিবছর ছয় কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যেত। এখনো রিকশার মালিকেরা বছরে লাইসেন্স নবায়নের চেয়েও বেশি টাকা চাঁদা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, অবৈধ রিকশার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে ২৮টি সংগঠন। সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, মহানগর রিকশা মালিক, বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, ফেডারেশনসহ আরো অনেক বেনামি সংগঠন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রিকশার লাইসেন্স বন্ধ। এর পরও সংঘবদ্ধ চক্র লাইসেন্স বা নম্বর প্লেট দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সিটি করপোরেশন। যেহেতু রাজধানীর গণপরিবহনে বিশৃঙ্খল অবস্থা; তাই স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের কাছে রিকশা বেশ জনপ্রিয়।
তাই যাত্রীদের চলাচলে রিকশা একটা বড় ভূমিকা রাখছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলদের সঙ্গে নিয়ে রিকশা চলাচলবিষয়ক একটি সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে। যারা পাড়া-মহল্লায়, অলিগলির রিকশার রুট এবং ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে। পাশাপাশি লাইসেন্স বা নম্বর প্লেট প্রদান করবে। এতে করে যাত্রী সাধারণও উপকৃত হবে পাশাপাশি সিটি করপোরেশন এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ও করতে পারবে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মহসীন আলী বলেন, সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আর অবৈধ রিকশার চলাচলের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ রিকশা ধরা তো পুলিশের কাজ। পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযানের জন্য আমাদের আহ্বান করে। পরে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি।
পিডিএসও/তাজ