অগ্রযাত্রায় উন্নত দেশগুলোকে পাশে চান প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সময়মত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বুধবার ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান আসে।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় প্রথাগত আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা যাতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক বৈশ্বিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে—সে দিকে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে আরও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক ওসামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উন্নয়ন ফোরামের ২০১৮ সালের এই বৈঠক দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অমিত সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রত্যয় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে। আগামী মার্চে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএনসিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনাসভায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এলডিসি হিসাবে বাংলাদেশ এখন যে সুবিধাগুলো পাচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে গেলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং কার্যক্ষেত্রে প্রস্তুতির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে হবে। সেই কৌশলগত প্রস্তুতি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিডিপির ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৪তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতির বিশ্লেষকদের মতে, ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ জিডিপি ও ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বের যথাক্রমে ২৮ ও ২৩তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতির তথ্য প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে উন্নয়নের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আর্ন্তজাতিক সহযোগী দেশ ও সংস্থাসহ ব্যক্তিখাতের অংশীদারিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারি কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি, অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, উৎপাদন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করতে পারলে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাগুলো আংশিকভাবে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। শিক্ষা ও দক্ষতার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়ানো যায়। পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি কৌশল প্রবর্তনের ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। দারিদ্র্য এবং লিঙ্গ-বৈষম্যকে তিনি নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম দুটি প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে যে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন।
পিডিএসও/হেলাল