ক্রীড়া ডেস্ক

  ১৪ জুন, ২০১৮

ব্রাজিলের কৌশলগত সুবিধা-অসুবিধা

টিটে পুরোদস্তুর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ধারক-বাহক সাম্বা ফুটবলের অনুসারী। তার অধীনে ব্রাজিলের খেলাতেই সেটির ছাপ স্পষ্ট। ব্রাজিল কেবল ম্যাচ জিতছেই না, দর্শকদের মন ভরানো ফুটবলও উপহার দিচ্ছে। বিশ্বকাপেও এই দুর্দান্ত ব্রাজিলকে দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন সেলেসাও সমর্থকরা। রাশিয়ায় টিটের ফরমেশন কী হবে, কোনটি হবে প্রথম একাদশ, খেলার কৌশল কী হবেÑসেই ধারণা দেওয়া হলো।

ব্রাজিল কোচ টিটের পছন্দের রণকৌশল ছক ৪-৩-৩। ফুটবলের বহুল প্রচলিত এ ফরমেশনটি আক্রমণ, মাঝমাঠ এবং রক্ষণে সামঞ্জস্য ধরে রাখে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলের অধিকাংশ ফুটবলারই ইউরোপের ক্লাবগুলোয় খেলে থাকেন। ইউরোপিয়ান ফুটবল এবং লাতিন ফুটবলে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখানেই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টিটের সামনে। খেলোয়াড়দের পুরোপুরি ব্রাজিলিয়ান ঘরানায় অভ্যস্ত না করিয়ে বরং ইউরোপিয়ান এবং ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দর্শনের মিশেল ঘটিয়েছেন তিনি। ফলও পাচ্ছেন হাতেনাতে।

টিটের কৌশলের মূল চাবিকাঠি একজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার। যিনি নিজেদের ডি-বক্সের আশপাশেই থাকবেন এবং প্রতিপক্ষের পাসিং লেন বন্ধ করাই হবে তার কাজ। এ কাজটি করবেন ফার্নান্দিনহো। এ ছাড়া দলে আছেন ক্যাসেমিরো, প্রতিপক্ষের সেরা খেলোয়াড়কে অচল করে দেওয়াই যার কাজ। মিডফিল্ডে আক্রমণ নষ্ট করতেও ক্যাসেমিরোর ওপরই আস্থা রাখবেন টিটে।

ব্রাজিল দলের হৃৎপি- হতে যাচ্ছেন ফিলিপ্পে কুতিনহো। প্লে-মেকিংয়ের দায়িত্ব থাকবে বার্সেলোনা তারকার ওপর। তার ড্রিবলিং, পাসিং, দূরপাল্লার শটে গোল করার ক্ষমতা এবং ডিফেন্সচেরা ফাইনাল পাস দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে; যা ডিফেন্সিভ খেলা দলগুলোর সঙ্গে ব্রাজিলের জন্য চাবিকাঠি হতে যাচ্ছে।

এক যুগ ধরে ব্রাজিলের শঙ্কার জায়গা ছিল তাদের নম্বর পজিশনটি। রোনালদো নাজারিও ডি লিমার বিদায়ের পর মানসম্পন্ন কোনো নম্বর নাইন পায়নি ব্রাজিল। তবে এবারের দলে একজন নন, দুজন বিশ্বমানের নম্বর নাইন রয়েছেন। একজন হলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস, টিটে নিজে তাকে বিশেষ নজরে দেখেন। বয়স মাত্র ২১ হলেও জেসুস ইতোমধ্যে জানান দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যরে। নেইমার, কুতিনহো, মার্সেলোদের তৈরি করা সুযোগ কাজে লাগাতে ডি-বক্সে ওত পেতে থাকবেন জেসুস।

অপরজন রবার্তো ফিরমিনো। ফিরমিনোর ঘরানার নম্বর নাইনদেরকে ফুটবলীয় ভাষায় বলা হয় ‘ফলস নাইন’। যারা সতীর্থদের সুযোগ তৈরির অপেক্ষায় না থেকে নিজের পজিশন থেকে একটু নিচে এসে সুযোগ তৈরি করে নেন। লিভারপুলের হয়ে গেল মৌসুমজুড়ে ফিরমিনো ফলস নাইন পজিশনে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। জেসুসের সঙ্গে মূল একাদশে জায়গা পেতে লড়বেন ফিরমিনো।

ব্রাজিলের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হলো তাদের বাঁ-দিক। যেখানে আছেন মার্সেলো ও নেইমার। মার্সেলো পজিশন অনুযায়ী লেফট ব্যাক হলেও আদতে তিনি আক্রমণ করতেই বেশি পছন্দ করেন। মার্সেলোর ওপরে উঠে আসার ফলে নেইমার নিজের বাম উইং পজিশন থেকে সরে মাঝে চলে আসার সুযোগ পাবেন। যার ফলে নেইমারকে মার্ক করা ডিফেন্ডার তার সঙ্গে সঙ্গে সরে যাওয়ায় সেখানে জায়গা তৈরি হবে। যেটি কাজে লাগিয়ে ওপরে উঠে আসতে পারবেন কুতিনহো। জেসুস কিংবা ফিরমিনোÑযে-ই খেলুন না কেন, অতিরিক্ত জায়গা পেয়ে যাবেন তারাও। একই কথা ডান দিক থেকে আক্রমণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ডগলাস কস্টা কিংবা উইলিয়ানÑযিনিই খেলুন, দুজনেরই সামর্থ্য রয়েছে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙে ফেলার।

টিটের হাতে প্ল্যান ‘বি’ হিসেবে থাকবেন গোলকিপার এডারসন! প্রতিপক্ষ যদি রক্ষণাত্মক মানসিকতার হয়, সে ক্ষেত্রে অ্যালিসনকে গোলকিপিং পজিশনে খেলাবেন টিটে। প্রতিপক্ষ যদি হয় আক্রমণাত্মক এবং হাইপ্রেসিং, তখন টিটে খেলাবেন এডারসনকে। হাইপ্রেসিংয়ের বিপক্ষে এডারসনের সফল পাস দেওয়ার সামর্থ্য এ ক্ষেত্রে তাকে এগিয়ে রাখবে।

ব্রাজিলের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা যদি হয় তাদের বাঁ-দিক, তাহলে সবচেয়ে দুর্বল জায়গাও তাদের বাঁ-দিক। কারণ মার্সেলোর অতিরিক্ত আক্রমণ করার প্রবণতা তার পেছনে অনেক জায়গা তৈরি করে। নেইমার রক্ষণে খুব একটা পারদর্শী নন। যার ফলে প্রতিপক্ষ যদি মার্সেলো ওপরে থাকা অবস্থায় বলের দখল নিতে পারে, তাহলে বাম দিক থেকে প্রতি আক্রমণে গোল হজম করার সম্ভাবনা থাকবে ব্রাজিলের। যেটার প্রভাবটা গত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সেলেকাওরা।

হাইপ্রেসিং দলগুলোর বিপক্ষে ব্রাজিলের রক্ষণ বেশ সমস্যায় পড়তে পারে। দুই মূল সেন্টার ব্যাক থিয়াগো সিলভা এবং মিরান্ডা দুজনের বয়সই ৩৩। খুব বেশি গতিশীল না হওয়ায় প্রতিপক্ষের গতিশীল স্ট্রাইকারদের বিপক্ষে সমস্যার সম্মুখীন হবেন তারা। ক্যাসেমিরো যেমন প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করতে ওস্তাদ, উল্টোভাবে হাইপ্রেসিং দলগুলোর বিপক্ষে তিনি প্রচুর ভুল করে থাকেন। সৃষ্টিশীল না হওয়ায় প্রেসিংয়ের সময় ক্যাসেমিরোর ভুল পাস ব্রাজিলের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

নিজেদের দুর্বলতাগুলো ঢেকে, সব বাধা পেরিয়ে ব্রাজিল যদি নিজেদের দর্শন ধরে রেখে ফুটবল খেলতে পারে, তাহলে তাদের স্বপ্নের ‘হেক্সা’ মিশন পূরণ হতে পারে এবারই। ২০১৪ বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন ভুলতে যেটির বিকল্পও নেই ব্রাজিলিয়ানদের কাছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist