গাজী মো. রাসেল
ত্রয়ীর অধরা বিশ্বকাপ
মেসি নেইমার রোনালদো
একজন খেলোয়াড় কোন মানদন্ডে তারকাখ্যাতি পাবে? তা নিয়ে অনেক বির্তক থাকতে পারে। তবে কখনো কোনো খেলোয়াড়কে একটি গন্ডির মধ্যে বিবেচনা করে তার তারকাখ্যাতি বিচার করা যায় না। তেমনি মাঠের খেলা ও দর্শক বিচারে যে খেলোয়াড়দের নাম সবার আগে আসে তারা হলেন লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার। বাংলাদেশে এই তারকা খেলোয়াড়দের ভক্তের কমতি নেই।
প্র্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাতানো এই তারকাদের কেউই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্বাদ নিতে পারেননি। এখন পর্যন্ত স্বপ্নের বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে উদ্যাপন কিংবা বিশ্বকাপে চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি মেসি-রোনালদো-নেইমারদের।
বিভিন্ন লিগে দুর্দান্ত খেলা এই তরকারা জাতীয় দলের পোশাকে ট্রফির বিচারে বেশ বিবর্ণ। এ নিয়ে বির্তকেরও কমতি ছিল না কখনো। অনেকে তো বলেই ফেলেন লিগের কারণে নাকি তারা জাতীয় দল নিয়ে তেমন ভাবেনই না। তবে একজন ফুটবলারের জন্য বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষ ইচ্ছা বলা যেতে পারে। তবে এই ত্রয়ীদের কারোই এই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। এখনো অধরাই থেকে গেছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ। থেকে গেছে তিনজনের বিশ্বকাপ আক্ষেপ।
তবে লিওনেল মেসির জন্য বিশ্বকাপ আক্ষেপটা হয়তো একটু বেশিই হবে। কারণ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ আসরে শিরোপার একবারে কাছে যাওয়ার পরও অধরা থেকে গেছে বিশ্বকাপ। জার্মানির সঙ্গে হেরে সেবার রানার্সআপ হয়েই আসর শেষ করতে হয়েছিল মেসিবাহিনীকে। জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ কোপা আমেরিকাসহ টানা তিন আসরের ফাইনালে হারার তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। তবে পাঁচবার ব্যালন ডি’অর পাওয়া এই তারকা খেলোয়াড় কী এবার বিশ্বকাপে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন? তাই দেখার বিষয়।
মেসি-রোনালদো দুইজনই বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনটি করে। তাতে তাদের কাউকে দেখা যায়নি সরূপে। তিন বিশ্বকাপে মেসি করেছেন ৫ গোল এবং তিনটি গোল করিয়েছেন। রোনালদো করেছেন তিন গোল এবং করিয়েছেন ২ গোল।
২০০৩ সালে পর্তুগাল জাতীয় দলে নাম লিখান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি এই রিয়াল তারকা। ২০১৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রোনালদোর নেতৃত্বাধীন পর্তুগাল। সেটা ছিল তাদের ফুটবল ইতিহাসের সেরা সাফল্য।
স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনালদো ক্যারিয়ারে অনেক শিরোপাকে নিজের করে নিয়েছেন। কিন্তু এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য করা হলেও এখনো বিশ্বকাপ স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে।
মেসি রোনালদোর পরে ফুটবল অঙ্গনে এলেও কম যান না ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। সাবেক বার্সা ফরোয়ার্ড যেন এলেন খেললেন আর জয় করলেন বিশ্বকে। জায়গা করে নিয়েছেন কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে। দুর্দান্ত ফুটবল মাঠকে ক্যানভাস বানিয়ে কারুকাজ করাই যেন তার স্বভাব। এই তারকা এখন পর্যন্ত একটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। সেই বিশ্বকাপে অবশ্য ৭ গোল খাওয়ার লজ্জা হজম করতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। যদিও ইনজুরির কারণে সেই ম্যাচে ছিলেন না এই ফুটবল সেনসেশন। সবকিছু ভুলে এবার হয়তো নেইমার চাইবেন বিশ্বকাপের ট্রফির গায়ে নিজেদের নাম লিখাতে।
অতীত বা পরিসংখ্যান দিয়ে কখনো শিরোপা নির্ধারণ করা যায় না। ফুটবল বরাবরই অনিশ্চয়তার খেলা। ৯০ মিনিটে যেকোনো কিছু হতে পারে। তাই রাশিয়া বিশ্বকাপে কে এগিয়ে আছে তা বলা দুষ্কর। তবে ফুটবল ভক্তরা হয়তো চাইবেন এই ত্রয়ীদের মাঝে একজন এবারের বিশ্বকাপ বগলদাবা করুক। মেসি রোনালদো কিংবা নেইমার ছুঁতে পারবেন তো স্বপ্নের অধরা বিশ্বকাপটি? তার জন্য ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত।
"