ক্রীড়া ডেস্ক
বিদায় রাশিয়া স্বাগত কাতার
পর্দা নামল রাশিয়া বিশ্বকাপের। টানা ৩২ দিন ফুটবল উন্মাদনায় ডুবে ছিল গোটা বিশ্ব। ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল সেই উন্মাদনা। বিদায় রাশিয়া। চার বছর পর আবার দেখা হবে কাতারে। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে রাশিয়া বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছে। তারা প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। তাই রাশিয়া বিশ্বকাপকে সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ বলতেও কার্পণ্য করেনি ফিফার কর্তাব্যক্তিরা।
অবশ্য আয়োজক হওয়ার পর এই বিশ্বকাপ কেমন হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কারণ বিশ্বকাপ, ইউরো কিংবা অলিম্পিক গেমস, রাশিয়ান সমর্থকরা হট্টগোল করবে না, তা তো হয় না। হট্টগোল, মারামারিতে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। ২০১৬ ইউরোতে তো রাশিয়ান সমর্থকরা ইংল্যান্ডের সমর্থকদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হলো। সেই সংঘর্ষের জের ধরে শতাধিক রাশিয়ান সমর্থক গ্রেফতার হয়েছিল। এমন কট্টর সমর্থকরা এবার ছিল বিশ্বকাপের মতো মেগা আসরের আয়োজক। তাই আতিথেয়তা ও অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ কেমন হবে সেটা নিয়ে অনেকে সন্দিহান ছিলেন। শঙ্কায় ছিলেন কোন অঘটন ঘটে সেটার।
কিন্তু কোনো রকম অঘটন কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে যে দলই রাশিয়া ছেড়েছে তারা আয়োজকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জার্মানির মুলার, পর্তুগালের রোনালদো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ের প্রতিনিধিরা রাশিয়ার আতিথেয়তার প্রশংসা করেছেন। রাশিয়া সবচেয়ে বড় প্রশংসা পেয়েছে শনিবার। এদিন আয়োজক রাশিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফাতিনো। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গেল কয়েক বছর ধরেই আমি বলে আসছিলাম যে রাশিয়া বিশ্বকাপ হবে সবচেয়ে সেরা বিশ্বকাপ। আজ আমি সেটা আরো জোর দিয়ে বলতে পারি। কারণ আমি নিজ চোখে সবকিছু দেখেছি। আপনারা দেখেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপ সর্বকালের সেরা।’
রাশিয়ার এমন সফল আয়োজন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে কাতার। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক তারা। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটির প্রধান আল তাওয়াদি বলেন, ‘রাশিয়া খুবই চমৎকারভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। যদি কোনো বিশ্বকাপ অবিতার্কিতভাবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়ে থাকে, মানুষের প্রশংসা কুড়িয়ে থাকে তাহলে সেটা রাশিয়া বিশ্বকাপ পেরেছে। রাশিয়ার এই আয়োজন থেকে আমরাও অনেক কিছু শিখেছি। সেগুলো আমরা প্রয়োগ করতে পারব। চেষ্টা করব রাশিয়ার চেয়েও সফল একটি বিশ্বকাপ আয়োজন করে দেখানোর।
কাতার ২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হয়। যদিও আয়োজক হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ খরচের প্রমাণ পায় এফবিআই। সেটা নিয়ে অনেক হট্টগোল হয়। ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আয়োজক হওয়ার থেকে তাদের নিবৃত করা যায়নি। ৩২টি দেশ নিয়ে ৭টি শহরের ১২টি মাঠে হবে কাতার বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০১০ সাল থেকেই প্রস্তুত হচ্ছে কাতার। নান্দনিক সব স্টেডিয়াম বানাচ্ছে তারা।
গেল কয়েক আসর ধরে জুন থেকে জুলাই এর মধ্যে বিশ্বকাপ হলেও ২০২২ বিশ্বকাপে তার ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। কাতারের অসহনীয় তাপের কথা বিবেচনা করে গ্রীষ্মকালের পরিবর্তে শীতকালে হতে পারে (নভেম্বর-ডিসেম্বর)। এরই মধ্যে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তেমন কিছুর ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে। ফিফার এমন ইঙ্গিত ইউরোপের ক্লাব ফুটবল কর্তাদের কপালে ভাজ ফেলে দিয়েছে। জুন-জুলাইর পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ হলে সেটা ক্লাব ফুটবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
"