সিম জালিয়াতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ চাই
বিস্তর শোরগোল তুলে আমাদের মোবাইল ফোনের সিমের পুনঃনিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক বা আঙুলের ছাপ নিয়ে এই পুনঃনিবন্ধন করা হয় জালিয়াতি ঠেকাতে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে হুমকি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটন করা হতো। অথচ এসব সিমের প্রকৃত মালিকদের হদিস প্রায়ই পাওয়া যেত না। এজন্যই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিল রেখে সিম পুনঃনিবন্ধন করার ব্যবস্থা করা হয় সিমের প্রকৃত মালিককে শনাক্ত করার সুবিধার জন্য। আশা করা হয়েছিল এর মাধ্যমে মোবাইল সিম ব্যবহার করে যেসব অপরাধ সংঘটন কিংবা অপরাধ সংঘটনে যোগাযোগ করা হয় তা সহজেই শনাক্ত করা যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও জালিয়াতির সন্ধান মিলেছে। আর এ জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কর্মকর্তারা। অর্থাৎ যে সরষে দিয়ে ভূত তাড়ানোর কথা সেই সরষেতেই ভুতের সন্ধান মিলেছে।
খবর অনুযায়ী একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এ সিম জালিয়াতির ঘটনা আবিষ্কার করে। এতে পুলিশ তেজগাঁও থানার বিভিন্ন স্থান থেকে বেসরকারি মোবাইল অপারেটর এয়ারটেলের তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে আটক করে। পুলিশি তদন্তে দেখা যায়, কারো অগোচরে তার আঙ্গঙুলের ছাপ ব্যবহার করে গ্রেফতারকৃতরা ভিন্ন সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে। সিমের আসল মালিকের অজানাই থেকে গেছে যে তার নামে আরেকটি সিম রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। এতে একদিকে যেমন ওই নিরাপরাধ সিম মালিক বিপদে পড়ছেন, তেমনি প্রকৃত অপরাধী নিজেদের আড়াল করে ফেলার সুযোগ পাচ্ছে। অর্থাৎ যে সমস্যার জন্য এ ব্যবস্থাটি নেওয়া হয় সেই সমস্যাটি থেকেই গেছে।
বিটিআরসি ও পুলিশের পাওয়া তথ্য মতে, সিম পুনঃরেজিস্ট্রেশনের সময় নানা অজুহাতে একাধিকবার সিম মালিকের আঙুলের ছাপ নিয়ে একাধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এ ছাড়া আটক বা গ্রেফতারকৃতদের কাছে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত’ কয়েক শ সিম পাওয়া গেছে। তারা এসব সিম উচ্চদামে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় এ-সংক্রান্ত অপরাধ কমবে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও এ জালিয়াতি ধরা পড়ায় এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার বিষয় সামনে এসে পড়েছে। শুধু একটি মাত্র অপারেটরের কিছু সিম জালিয়াতি ধরা পড়েছে। আরো যেসব অপারেটর রয়েছে তাদের বেলায়ও এমনটি ঘটা বিচিত্র নয়। তাই এ ব্যাপারে বিটিআরসি, পুলিশ এবং অপারেটরদের সবারই সমন্বিত একটি অভিযান বা হিসাবনিকাশ প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের সিম জালিয়াতিতে নিরপরাধ কেউ সমস্যায় পড়–ন কিংবা নাজেহাল হন তা কাম্য নয়। বৈধভাবেও কেউ একাধিক সিমের পুনঃনিবন্ধন করতে পারেনÑসে বিষয়টিও দেখতে হবে। তবে এ জালিয়াত চক্র ধরা পড়ায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। না হলে যেজন্য এই বায়োমেট্রিক নিবন্ধন তাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
"