reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ জুলাই, ২০১৬

অনুবাদ

ব্রেক্সিট এবং ইউরোপের ভবিষ্যৎ

জর্জ সরোস

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বৃটেনের সম্ভাব্য সব ধরনের লাভজনক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল। ব্রিটেন যদিও ইইউর একক মুদ্রা ইউরো গ্রহণ করেনি তবুও তারা ইইউর একক মার্কেটের অংশীদার ছিল এবং দেশটি ইইউর নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের দ্বারা একটি ভালো নিরাপত্তা বেষ্টনীর বলয়ে ছিল। এতসব সুবিধা পাওয়ার পরও যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে লিভ করার বা বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কেন?

এর উত্তর পওয়া যেতে পারে মাসব্যাপী আলোচিত মতামতের ভোট বা গণভোটের রায় থেকে যাকে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট। ব্রেক্সিট বিতর্ক ?এমন সময় শুরু হয় যখন সমগ্র ইউরোপজুড়ে শরণার্থী সমস্যা প্রকট। ইইউ সদস্য দেশগুলোতে দ্রুত শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফ্রান্সের কায়লাস বন্দর হয়ে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা লিভ গ্রুপের মনোযোগ আকর্ষণ করে। নিয়ন্ত্রণহীণভাবে শরণার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে যে কোনোভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করছিল, যা গণভোটের বিতর্কে বারুদের মতো কাজ করে। যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট বিতর্ক চলাকালে ইউরোপ জুড়ে শরণার্থীর সমস্যায় পরিস্থিতি ভয়ানক অবনতি হলেও ইইউ শরণার্থী সমস্যার সমাধানে যথাযথ নীতি প্রণয়নে বিলম্ব করে; উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কায়লাস বন্দরে শরণার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ও ?বিশৃঙ্খল দৃশ্য।

জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেল শরণার্থীদের জন্য তার দেশের দরজা খুলে দেন, যা ?ছিল উৎসাহব্যঞ্জক কিন্তু এতে পুরো শরণার্থী সমস্যাকে অবজ্ঞা করা হয় এবং তা যথাযথভাবে চিন্তা করা হয়নি। এর ফলে ইইউর সদস্য দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের আন্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা সমগ্র ইইউতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বিঘিœত করে। ইইউ শরণার্থী সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয় জনগণ, পাবলিক নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ এবং শরণার্থীরা নিজেরাও তীব্র সমস্যায় জর্জরিত হয়। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে শরণার্থী সমস্যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা পরে ইইউভুক্ত সদস্য দেশসমূহে ইইউবিরোধী ?বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ সৃষ্টিতে উৎসাহ জোগায়। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্যের ‘ইনডিপেনডেন্ট পার্টির’ কথা বলা যায়। এ দলটি যুক্তরাজ্যের গণভোটের ব্রেক্সিটের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়। গত ২৩ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণ ব্রেক্সিটের পক্ষে এক ঐতিহাসিক রায় দেন। এখন আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে যাবে।

তাই ইইউতে বর্তমানে একটি ?বিপর্যয়মূলক দৃশ্য উন্মোচিত হয়েছে এবং ইইউ অভাবনীয় বিভাজনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগ তুলনামূলকভাবে ভালোও হতে পারে আবার নাও হতে পারে কিন্তু দেশটির জনগণ ও অর্থনীতি স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সংকটে পড়বে। ব্রেক্সিটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী মুহূর্তেই যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড স্টারলিংয়ের মান গত ?তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন হয় এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারসমূহে দরপতন হয়। ইইউ থেকে বের হওয়ার জন্য ব্রিটেন অনেক জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। ফলে ব্রিটেনের অর্থনীত ২০০৭-০৮-এর মতো সংকটে পড়বে।

যুক্তরাজ্য ইইউ জোট ত্যাগ করলে তা এ জোটে অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকির সৃষ্টি করবে। ব্রেক্সিট জয় লাভ করার কারণে তা ইইউর সদস্য দেশসমূহের ইইউবিরোধী শক্তিসমূহকে উৎসাহিত করবে। ব্রেক্সিটের ফলাফল প্রকাশের পর মুহূর্তে ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদীরা ফ্রেক্সিটের ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের জাতীয়তাবাদীরা নেক্সিট আয়োজনের ঘোষণা দেয়।

ব্রেক্সিটের প্রতি ইইউ কীভাবে সাড়া দেয় তার ওপর ইইউর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। ইইউর নেতারা ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যকে ইইউর ‘একক মার্কেট’-এ প্রবেশ করার অনুমতি নাও দিতে পারে; এটিই হয়তো তাদের ব্যথাকে কিছুটা লাঘব করবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

ইইউর সদস্য দেশসমূহের আন্তসম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে পৌঁছেছে শুধু শরণার্থী সমস্যাকে কেন্দ্র করেই নয় বরং ইউরোজোনের ঋণদাতা ও গ্রহীতা দেশসমূহের ব্যতিক্রমী পদ্ধতি নিয়েও! তা ছাড়া বর্তমানে ফ্রান্স এবং জার্মানি তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। ইতালির স্টক মার্কেটে ১০% ধস ও ব্যাংকিংব্যবস্থার সংকট সেখানে ব্রেক্সিটের পথকে অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে। ইতালির ইইউ?বিরোধীদের দল ‘ঋরাব ঝঃধৎ গড়াবসবহঃ’ ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং রোমের মেয়র পদে বর্তমানে এ দলটিই আছে। এভাবে ইতালির পরবর্তী বছরের সধারণ নির্বাচনে এ দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি।

ইইউর কোনো সদস্য দেশই এটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের ?বিষয়ে উৎসাহিত নয়। বর্তমানে যেসব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে এবহঁরহব ঋরহধহপরধষ টহরড়হ, ঈড়হঃৎড়ষষবফ ঋরংপধষ টহরড়হ এবং গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ কৌশল প্রণয়ন করা। অন্যদিকে ইইউ তুরস্ক ও রাশিয়া থেকে বাহ্যিক চাপে আছে। তুরস্ক ও রাশিয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইইউর অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে সুবিধা আদায় করে নেওয়া।

জর্জ সরোস : চেয়ারম্যান সরোস ফাউন্ডেশন

প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন মানছুর হোসেন খাঁ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist