শিশুর বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি হোক
ছয় বছরের শিশু সানজিদার মর্মন্তুদ মৃত্যুর একটি খবর ছাপা হয়েছে গতকাল শুক্রবারের প্রতিদিনের সংবাদে। খেলার সাথী আরেক শিশু তামিমের সঙ্গে ওয়াসার বর্জ্য নিকাশের নালার পাশে খেলার ছলে শাক তুলতে গিয়ে অনবধাবনতায় নালায় পড়ে গিয়ে প্রাণ হারায় সানজিদা। সংবাদটির সঙ্গে সানজিদার একটি হাসিমাখা মুখের ছবিও ছাপা হয়েছে। এই জগতের, বিশেষ করে সমাজের যে অবস্থানের শিশু সে, সেই অবস্থানের হাজারো দুর্ভাবনার কোনো ছাপ নেই তার চোখে-মুখে। এই বয়সে থাকার কথাও নয়। খেলে বেড়িয়ে উচ্ছল সময় কাটানোর কথাই তার। অথচ সেই শিশুটি চিরতরে হারিয়ে গেল নিরাপত্তাহীনভাবে তৈরি নালায় পড়ে। এমন দুঃখজনক ঘটনা আরো ঘটেছে। কিছুদিন আগে খিলগাঁয়ে এক শিশু ঢাকনাহীন ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে সুয়ারেজ লাইনের সুড়ঙ্গে মারা যায়। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়।
সানজিদা যে নালায় পড়ে মারা গেছে, সে নালাটি ১০ থেকে ১২ ফুট গভীর। এবং তার পাড় ও নিচের দিকটা পাকা। হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যে বর্জ্য নিষ্কাশিত পানি বহমান থাকার এবং এর একটি নেটের ঢাকনা থাকার কথা। ফলে কেউ পড়ে যেত না কিংবা পড়ে গেলেও তাকে দেখা যেতো এবং উদ্ধার সহজ হতো। কিন্তু তা হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তাতে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার ময়লার স্তূপ জমেছে। নালায় পড়ে গিয়ে সানজিদা এই ময়লার নিচে হারিয়ে যায়। ঘটনাটি এতটাই হৃদয়বিদারক যে স্থানীয় লোকজন তো দূরের কথা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদেরই তার মৃতদেহ খুঁজে পেতে দুই দফায় ১৯ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এটাকে এসব নালা কিংবা ম্যানহোল অথবা বিদ্যুতের তার দেখভালের যে কর্তৃপক্ষ স্রেফ তাদের অবহেলা ছাড়া আর কি বলা যায়?
রাজধানী ঢাকা বড়দের যেমন তেমন শিশুদের বাসযোগ্য আছে কিনা সে বিষয়টি ভাববার সময় এসেছে। শিশুরা সারা দিনমান ঘরে আটকা থাকবে এটা তো ঠিক নয়। অথচ তাই। তাদের সময় কাটানোর কিংবা খেলাধুলার কোনো মাঠ কিংবা খোলা জায়গা রাখা নেই প্রায় প্রতিটি পাড়া বা মহল্লায়। দু’একটি মহল্লায় যাও আছে তা হয় বেদখল নয়তো ময়লা আবর্জনা জমে ব্যবহারের অনুপযোগী। সুয়ারেজ লাইন সংযোগের নালা কিংবা ম্যানহোলও খোলা থাকে। এসব শিশু খেলার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নেমে আসে এবং অনিরাপদ নালা কিংবা খোলা ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারায়। বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অবশ্যই আমলে নেয়ার সময় এসেছে। শিশুরা ঘরেও নিরাপদ নয়। ইদানীং তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছে বেশি। প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন বলে তারা সহজে সহিংসতার শিকার হচ্ছে তাদের দ্বারাই যারা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। সব মিলিয়ে শিশুরা এখন ঘরে বাইরে সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতার অসহায় শিকার। শিশু সানজিদার মর্মন্তুদ মৃত্যুও এমনই অবহেলার এক নজির। আমরা আশা করব সানজিদার মতো আর কোনো শিশুর যেন এমন পরিণতি না ঘটে। শিশুদের বাসযোগ্য করা হোক রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ।
"