reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ জুলাই, ২০১৬

টুকরো আলাপ

মঙ্গোলদের দেশে

মোহনা খানম

মঙ্গোলিয়ায় এশীয় ও ইউরোপীয় দেশগুলোর আসেম সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য ‘যোগাযোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের অংশীদারত্ব’। সেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা অনেক নেতা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী এর আগে মঙ্গোলিয়া গেছেন কিনা আমার জানা নেই। মঙ্গোলিয়ায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিতে দেখে তাদের ইতিহাসের কথা মনে পড়ে গেল। প্রাচীন মঙ্গোলীয় ইতিহাস খুব প্রশংসনীয় নয়। মধ্যযুগে এদের লুণ্ঠনকারী হিসাবে জানত সবাই। ৭ হাজার বছর আগে এরা শস্য উৎপাদন তথা কৃষির পত্তনও ঘটিয়েছিল অবশ্য। ৬ হাজার বছর আগে এরা লিপি ব্যবহার শিখেছিল।

বর্তমানে মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা এশিয়ার মঙ্গোলিয়া, চীন, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর অঞ্চলের প্রধান জনগোষ্ঠী। মালোয়েশিয়ায় এদের বিশাল অংশ বসবাস করে। সেই তুলনায় ইন্দোনেশিয়ায় তুলনমূলক কম। এছাড়া রাশিয়ার এশিয়া অংশে এদের দেখা যায়।

প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে এরা প্রবেশ করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দিয়ে। এরা প্রথমে পূর্ব ও উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বিশেষত চীন-ভারতের সীমান্তবর্তী তিব্বত, ভুটান এবং হিমালয়ের ভারতবর্ষে অভিমুখী অঞ্চল নেপাল, সিকিম এবং তৎসলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মঙ্গোলদের একটি শাখা প্রবেশ করেছিল মায়ানমারের চীন প্রদেশের চীন পাহাড়ের বন্ধুর পথ পেরিয়ে।

মঙ্গোল জাতির প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় চেঙ্গিস খানকে। ঐতিহাসিক বার্থহোলডের ভাষায়, চেঙ্গিস খান আক্ষরিক অর্থে নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু সামাজিক এবং সামরিক প্রয়োজনের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল প্রখর। ডাকপিয়নের ব্যবস্থা তিনি তার রাজ্যজুড়ে প্রবর্তন করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিস খান একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা এবং সেনানায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ইতিহাসের ধারাও অবশ্যই তিনি পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মঙ্গোলিয়ার স্তেপ অঞ্চলের মধ্যাঞ্চলে চেঙ্গিস খান তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তার রাজধানীর নাম ছিল কারাকোরাম। কারাকোরামের শ্বেত প্রাসাদে রতœখচিত সিংহাসনে বসে তিনি দূর চীন, ইউরোপ, পারাস্য এবং ভারতবর্ষের রাষ্ট্রদূতদের সাদর সম্ভাষণ জানাতেন। সেখানে বসে তিনি পরিকল্পনা করতেন পরবর্তী যুদ্ধের। সেসব যুদ্ধের পরিণতিতে মঙ্গোল বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল ভিয়েনার দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত। মঙ্গোলিয়ার বর্তমান রাজধানী উলানবাটোরে চেঙ্গিস খানের একটি প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান নেই। বর্তমান প্রজন্ম তাকে ভুলে যেতে চায়।

বাংলাদেশে মঙ্গোলদের একটি শাখা মগ ইতিহাসে বিশেষ আলোচিত। মগদের দস্যু বলা হয় এখানকার ইতিহাসে। চট্টগ্রাম এবং সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে তারা প্রভাব বিস্তার করে থাকত। শরীরের কাঠামো ও শক্তিতে তারা ছিল বলশালী। পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে ভারী সব কাজ তারা অবলীলায় করে ফেলত। ডাকাতিও তারা করত বলে কোনো কোনো ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই মগরা আর নেই। তারা এখন মূল জনস্রোতের সঙ্গে মিশে গেছে।

মঙ্গোলরাও আর আগের মতো নেই। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে তারা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অংশ হয়ে রয়েছে। গণতন্ত্র ও স¤প্রীতির রাজনীতিতে তারা বিশ্বাস করে। সোভিয়েত ইউনিয়েনের সময়ে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু ছিল দেশটিতে। ১৯৯০ সালে তা থেকে বেরিয়ে আসে দেশটি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাখিয়াজিন এলবেগদোর্জ টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন।

মঙ্গোলিয়া এখন পর্যটনের জন্য অন্যতম লোভনীয় স্থান। বিশেষত এখানকার বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা আধুনিক মানুষদের জন্য এক রহস্যই বটে। দেশটির রাজধানী উলানবাটোর অনেক উন্নত ও ব্যবসাবান্ধব। চীন এবং রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশটি রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চীন-রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ না থাকায় দেশটিতেও শান্তি বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পরিবেশও সেখানে গণতান্ত্রিক। তাদের আতিথেয়তার সুনাম রয়েছে। ইতিহাসের মহাপরাক্রমশালী একটি জাতি আজ কেমন শান্ত ও উন্নত তা ভাবতেই অবাক লাগে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist