নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

ব্যাংকিং চ্যানেলের কড়াকড়িতে হুন্ডিতে আগ্রহী প্রবাসীরা

ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স কমছে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ রেমিটেন্সের এই নি¤œমুখি প্রবণতায় উদ্বিগ্ন সরকার। এর কারণ খুঁজতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়। দফায় দফায় বৈঠক করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি বুঝতে প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া গিয়েছেন।

রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। বিদেশ থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো রোধে শীর্ষ মোবাইল লেনদেনকারী বিকাশের ক্যাশ আউট (অর্থ উত্তোলন) বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকারা। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। পরে কঠোর করা হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা।

মূলত প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের নানাবিধ ঝামেলা এড়াতেই অবৈধ চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন। কারণ আগে যেখানে খুব সহজেই রেমিটেন্স পাঠানো যেত, এখান সেখানে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। ২৪ ঘন্টা ব্যাংক খোলা না থাকায় প্রবাসীদের পাঠানো টাকা তুলতে সময় নষ্ট হয়। এসব কারণে একদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসী আয়, অন্যদিকে বাড়ছে হুন্ডির ঘটনা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ একাধিক সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মানি লন্ডারিং বিষয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে রেমিটেন্স পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। এর মধ্যে আছে আয়ের বৈধ সনদ দিতে হয়। একইভাবে পাঠানো অর্থের সুবিধাভোগীদের পুরো তথ্য দিতে হয়। এসব কারণে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলকে হয়রানি মনে করেন। ফলে তারা বিকাশসহ হুন্ডিতে টাকা পাঠাতেই বেশি আগ্রহী। এর কারণ অনেক প্রবাসীই বিদেশে গিয়ে কাজের বৈধতা পায় না। এ কারণে টাকা আয় করলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে ব্যাংকের চেয়ে ভালো দাম পাওয়া যায়। এতে কোনও চার্জ দিতে হয় না। এমনকি প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার ও সময়ক্ষেপণ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকের রেট কম হওয়া ও মাসুল কাটার কারণে টাকার পরিমাণও কমে যায়। হুন্ডিতে পাঠালে সময় বাঁচে, টাকাও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি। আবার হুন্ডিওয়ালারা প্রবাসী শ্রমিকের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসেন।

বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ টাকার বেশি। ব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য গড়ে ৮০ টাকা হলেও খোলাবাজারে তা ৮৪ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য বেশি টাকার আশায় অনেকেই অবৈধ পথ বেছে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০১৩ সালে যা ছিল ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৩ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কোনও অর্থ না আসলেও ২০১৬ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মাধ্যমে এসেছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ আর মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ও রেমিটেন্স কমার জন্য ব্যাংকের মাসুল ও চার্জকে দায়ী করে করেছে। বর্তমানে নামমাত্র চার্জ থাকলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নির্ধারকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে গত অর্থবছরে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist