নিজস্ব প্রতিবেদক
জিডিপি অনুপাতে বাড়ছে না কর্মসংস্থান
দেশে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপি বাড়লেও কর্মসংস্থান সে হারে বাড়ছে না। গত চার বছরে দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৫ লাখ। এসময় কর্মসংস্থান হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু না হওয়াতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে দেশে ১৪ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। এর আগের দুই বছরে এই সংখ্যা ছিলো ২১ লাখ।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের সরকারি দাবি সত্যি হলে দেশে বেকারত্বের হার এভাবে বাড়তো না। শিল্পখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়াই কর্মসংস্থান কমার কারণ, এমন কথাও বলছেন উদ্যোক্তারা। তবে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে সিপিডি। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জন নিয়ে বার বার সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ^ ব্যাংক এবং আইএমএফ। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ত্রৈমাসিক এক পর্যালোচনায় বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতি এখন আর চাকরির বাজার সৃষ্টির নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। এখন এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে চাকরিবিহীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, কর্মমুখী ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা না হওয়ার কারনেই কর্মসংস্থার বাড়ছে ধীর গতিতে। একইভাবে অনউৎপাদনশীল খাতকে উৎপাদনশীল খাতে আনা গেলেই দেশের বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান উভয়ই বাড়বে। রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা না গেলে কর্মসংস্থান বাড়ানো কঠিন বলেও মত দেন তারা।
এছাড়া দেশে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। বিনিয়োগ যেমন কম হচ্ছে তেমনি কর্মসংস্থানও কম হচ্ছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে বিনিয়োগ অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কোন সুফল পাবে না দেশের মানুষ। এদিকে, প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের প্রত্যাশা ছিল, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে কৃষি খাতে। কিন্তু এ বছর প্রতি নিয়তই চালের দাম বাড়ছে। সারা দেশের ব্যাপক হারে ফসলের হানি হচ্ছে। হিসাব মিলছে না শিল্পখাতে। একই অবস্থা দেশের নির্মান খাতেও। গত কয়েক বছর ধরেই এ খাতে নিম্মমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমে গেলেও বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ ভাগ প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়নি।
মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ নিয়েও সন্দেহ নানা মহলে। গত এক বছর তেমন কোন নতুন কর্মসংস্থা হয়নি। তাহলে কিভাবে এত টাকা আয় হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে দেশে সরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করলেও বেসরকারি বিনিযোগ কম থাকার কারনেই নতুন করে কোন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। মূলত অবকাঠামো খাত ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে সরকার প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারত্ব সাড়ে তিন শতাংশ। অর্থাৎ যারা সপ্তাহ অন্তত এক ঘণ্টা কাজ করেছেন। এছাড়া কর্মক্ষেত্র নিয়ে সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র বৈজ্ঞানিক জরিপ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। এ জরিপ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৮ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে আসছে। এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদ ড: মুস্তাফিজুর রহমান বলছেন, বাংলাদেশের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের একভাগের নিয়মিত কোন কর্মসংস্থান নেই।
"