নিজস্ব প্রতিবেদক
শুল্ক কমাতে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম
ফের অস্থিরতা শুরু হয়েছে চালের বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। এমনকি বৈশাখে নতুন চাল না আসা পর্যন্ত চালের দাম বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানান রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারা। অথচ কয়েক বছর ধরেই দেশে পর্যাপ্ত পরিমান চালের মজুদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবুও কেন বাড়ছে চালের দাম?
মিনিকেট বোরো মৌসুর চাল। নতুন বোরো মৌসুম শুরু হতে আর মাত্র মাস খানেক সময় বাকী আছে। ফলে এ চালের দর একটু বাড়তে পারে। কিন্তু গত তিন মাসে কেজিতে ১২ টাকা বাড়া অস্বাভাবিকতা। আমদানি শুল্ক কমাতেই চালের দর নিয়ে এমন চালাবাজি হচ্ছে বলে সরকার পক্ষ বলা হচ্ছে।
দেশে পর্যাপ্ত পরিমান চাল মজুদ থাকলে আমদানির প্রয়োজন নেই। তাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এসব বিবেচনা করে আমদানি কমাতে এবং সরকার কৃষকদের সুরক্ষা দিতে চলতি বাজেটে চাল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে চাল আমদানিকে অনুৎসাহিত করে। এর আগে এ শুল্ক ছিলো ১০ শতাংশ। কিন্তু বাজারে যেভাবে চালের দাম বাড়ছে তাতে কৃষকের কোন লাভ নেই। মিল মালিকরাই এক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছেন।
অন্যদিকে চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতে কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে মনে করছে সরকার। এবার মূল হোতাদের ধরার মিশনে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটি। কমিটি প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করা আমদানিকারকদের মূল হোতা বলে সন্দেহ করছে। কারণ এর আগে আমদানিকারকদের শুল্ক কমানোর আবেদন নাকচ করেছে ট্যারিফ কমিশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর ও কক্সবাজারের একশ্রেণীর আমদানিকারক চালের বাজার অস্থিতিশীল করার মূল হোতা। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, খুলনা, শেরপুর এবং ময়মনসিংহের এক শ্রেণীর মিল মালিকরা। এই সংঘবদ্ধ চক্রটির কলকাঠি নাড়ানোতেই সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মিনিকেট, নাজিরশাইল এবং মোটা চালের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যবসায়ীদের কৌশলের কাছে সরকার কৃষকের স্বার্থ তুলে দেবে না। কারণ শুল্ক কমালেই বানের জলের মতো ভারতীয় চাল ঢুকে কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে। কারণ এক মাস পরেই বোরো মৌসুম শুরু হবে। তখন চালের বাজার মন্দা থাকার কৌশলকেই ধানের দাম কমানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে মিল মালিকরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামিমা ইয়াসমিন জানান, বহু দিন থেকে ধানের দাম বাড়ানোর দাবি উঠেছিলো কৃষককে ন্যায্য মূল্য দেওয়ার জন্য। যেন উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারে। কিন্তু যেভাবে চালের দাম বেড়েছে তাতে মিল মালিকরা দ্রুত মুনাফা তুলে জনগণের পকেট কাটছে। আর আমদানিকারকরা বাজার স্থিতিশীলতার কথা বলে চাল আমদানির শুল্ক কমানোর পায়তারা করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চালের দাম জনগণের নাগালে আনতে সরকার কর্মসূচি বেগবান করেছে। এর মধ্যে ১০ টাকা কেজি চালের কর্মসূচি জোরালো হয়েছে এবং সারা দেশে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসূচিও চালু হয়েছে। অপরদিকে, মৌসুমের শেষ দিকে এসে ধান সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে চালের সংকট নেই বলেও তারা জানান। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, চালের দাম কমাতে হলে চালের আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। গত বাজেটের আগে চাল আমদানি শুল্ক ছিলো ১০ শতাংশ। তখন মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর সাহস দেখাননি। কারণ, আগে ভারত থেকে বাসমতী, মিনিকেট, স্বর্ণাসহ বিভিন্ন ধরনের চাল আমদানি হতো। চলতি বাজেটে আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোয় চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।
"