নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ জুলাই, ২০২০

করোনার প্রভাব রাজস্ব আয়ে

বিশাল ঘাটতির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক

করোনার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়েও। গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায়ে গড়ে ১৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হলেও এবার উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমে গেছে আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ে কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ঘাটতি প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের শুরুতে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা হিসাব করলে, এই ঘাটতি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজস্ব আহরণে এমন নাজুক অবস্থা আর কখনো দেখা যায়নি। তাছাড়া বিশাল ঘাটতির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও ছিল ঋণাত্মক অর্থাৎ ২০১৮-১৯ বছরের সমপরিমাণ রাজস্বও ২০১৯-২০ অর্থবছরে আহরণ করতে পারেনি রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

দেশে বিগত বছরগুলোর রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অতীতে বিভিন্ন সময়েই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল। কিন্তু এ বছর তা রেকর্ড করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়েও আদায় কমে গেছে।

এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী,গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ঘাটতি ৮৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গেল অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজস্ব আয়ের তিন খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে মূল্য সংয়োজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে। বিদায়ী অর্থবছরে ভ্যাট থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরপরে বেশি আদায় হয়েছে আয়কর থেকে। আয়কর থেকে মোট আদায় হয়েছে ৭৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এছাড়া কাস্টম থেকে আদায় হয়েছে ৬০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৮৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। আয়কর আদায় হয়েছিল ৭২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর শুল্ক আদায় হয়েছিল ৬৩ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় রাজস্ব আহরণে ধস নেমেছে। সাধারণত অর্থবছরের শেষ সময়ে বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুনে রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে বাড়ে। ঠিক এই সময়টাতেই করোনা বেশি আঘাত হেনেছে। আর রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় সরকারের নিয়মিত খরচ মিটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এটি সাময়িক হিসাব। এ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। এতে খাতভিত্তিক বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে।

এনবিআর সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একবার ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই সময় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এর পরবর্তী বছরগুলোতে রাজস্ব আয় বাড়লেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়নি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। পুরো রাজস্ব বিভাগের খোলনালচে বদলে ফেলতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ না বাড়ালে সরকার বড় ধরনের বিপদে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close