নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ জুলাই, ২০২০

নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু

চলমান মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই নানামুখী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে গতকাল বুধবার থেকে শুরু হলো নতুন অর্থবছর ২০২০-২১। গতকাল থেকেই বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বাজেট। করোনার প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেট তৈরিতে মানুষের জীবন-জীবিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পাশাপাশি সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ ছিল। গত ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও করোনার ঝুঁকিতে কোনো কিছুই স্বাভাবিক হয়নি। গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে ‘মানুষ বাঁচানোর বাজেট’ বলে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা বলেছেন, মানুষকে রক্ষা করার জন্য এবারের বাজেট করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চিন্তা করেছেন মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে। তাই আয়ের অপেক্ষা না করে খরচের হিসাব করতে হয়েছে। তা ছাড়া এবারের বাজেট কোনো গতানুগতিক বাজেট নয়। অতীতের অর্জন ও অভিজ্ঞতা পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশি-বিদেশি ইকোনমিক থিংক ট্যাংক যারা আছেন, তাদের সবার মতামত নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার পুরো বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর মানুষকে রক্ষা করার জন্য, মানুষকে বাঁচানোর বাজেট দেওয়া হয়েছে। তাই মানুষকে বাঁচানোর জন্য যত টাকা লাগবে, তার ব্যবস্থা করা হবে। দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা আগে খরচ করব, তারপর আয় করা হবে। গ্রামবাংলসহ সারা দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠন করা হবে। এ মুহূর্তে আমাদের দায়িত্ব হলো দেশের মানুষকে রক্ষা করা। আমাদের সামনে অন্ধকার নেমে এসেছে, এই অন্ধকার মোকাবিলা করতে হবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা ১০০টি ইকোনমিক জোন করে দিয়েছি। এসব জোনে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। ব্যাংকের সুদের হার ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। গত পাঁচ বছর আমরা বাজেটে দেওয়া প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এ বছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হব।

তিনি আরো বলেন, এ বছর দুটি বিষয় মাথায় রেখে বাজেট তৈরি করা হয়েছে। বিষয় দুটি হলো করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা চিহ্নিত করা এবং অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তা ছাড়া এবারের বাজেট স্বাভাবিক সময়ের বাজেট নয়, গতানুগতির ধারার বাজেটও নয়। বাজেট করার আগে আমাদের কাছে ডেটা ছিল না, তথ্য-উপাত্ত ছিল না। স্বাভাবিক পথ ছিল রুদ্ধ। তাই ভিন্ন পথে বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। আর এ কারণে বাজেটে কোথাও কোথাও অসংগতি মনে হতে পারে অনেকের কাছে। কিন্তু এ ছাড়া উপায় ছিল না। বাজেট না থাকলে কীভাবে টাকা নেব। তাই বাজেট করতে হয়েছে। গত ১০ বছরে সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয়ে আমরা সারা বিশ্বে সেরা। ভারত ও চীন আমাদের সমান ছিল। এসব অর্জন বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে বহু দিন থেকেই স্থবিরতা বিরাজ করছে, যা এখনো বিদ্যমান। এ ছাড়া উন্নয়ন কর্মকা- থমকে রয়েছে। নতুন করে কোনো ধরনের বিনিয়োগ হচ্ছে না। তাই সরকারের রাজস্ব আয় কমলেও বেড়েছে খরচ। এমন পরিস্থিতিতে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণসহ বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করাই হবে সরকারের চ্যালেঞ্জ। অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে, বিনিয়োগ বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, নতুন করে দারিদ্র্যের হার ঠেকানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা। এসব চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেই গতকাল থেকে শুরু হলো নতুন অর্থবছরের হিসাবনিকাশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও দ্বিতীয় বাজেট। এর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে দুই মেয়াদের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১০টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। এরও আগে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকার গঠিত হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া দিয়েছিলেন পাঁচটি বাজেট। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার দিয়েছিল তিনটি বাজেট। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২০তম বাজেট।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close