সরকারি কোষাগার থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার ছয়টি ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে স্থানান্তরের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়ায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) প্রোগ্রামার মো. সিদ্দিকুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করে গুরুদ- দিয়েছে সরকার। তার আগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। প্রজ্ঞাপনটি গতকাল জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) ঢাকার প্রোগ্রামার মো. সিদ্দিকুর রহমানের (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) বিরুদ্ধে প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন তার সহযোগিতায় অর্থ বিভাগের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের এস এ এস সুপার মো. শরিফুল ইসলাম (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) কর্তৃক ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগার থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখায় শরিফুল ইসলাম নিকট আত্মীয়-স্বজনের নামে ছয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে স্থানান্তর করেন।

মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সুপার মো. শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে ডেটাবেইস সিস্টেমের আইবাস ইউজার ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ব্যাক অ্যান্ড থেকে ওই অর্থ স্থানান্তর-সংক্রান্ত ডেটা মুছে দিতে সহায়তা করেন। এই সংশ্লিষ্ট তথ্য মুছে ফেলা ও সরকারি কোষাগার থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতে সহযোগিতা করেন বিধায় প্রোগ্রামার মো. সিদ্দিকুর রহমানকে (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর ৩ (ডি) অনুযায়ী {বর্তমানে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩ (ঘ)} অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ বিবরণী ও অভিযোগনামা জারি করা হয়। তাই অর্থ বিভাগ ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট মো. সিদ্দিকুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর লিখিত জবাব এবং শুনানি সন্তোষজনক না হওয়ায় অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। তদন্ত প্রতিবেদন, প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র এবং অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় একই বিধিমালার ৪-এর ৩(ঘ) অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ গুরুদ- আরোপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপর একই বিধিমালার ৭(৯) অনুযায়ী দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নোটিসের লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৭(১০) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পরামর্শকরণ) রেগুলেশন, ১৯৭৯-এর ৬ নম্বর রেগুলেশন অনুযায়ী মো. সিদ্দিকুর রহমানকে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ গুরুদণ্ড আরোপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কমিশন এই বিষয়ে একমত পোষণ করে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের মতামত, বিভাগীয় মামলার সব বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং মামলার সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে মো. সিদ্দিকুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(ঘ) অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার-৪-এর ৩(ঘ) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সদয় সম্মতি গ্রহণ করা হয়। সিজিএ কার্যালয় ঢাকার প্রোগ্রামার মো. সিদ্দিকুর রহমানকে (সাময়িকভাবে বরখাস্ত) সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৪-এর ৩(ঘ) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ গুরুদণ্ড দেওয়া হলো।

"