নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২০

প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হলেও কাক্সিক্ষত বেসরকারি বিনিয়োগ নেই

বাংলাদেশ ৮ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। উপরন্তু বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার নিম্নমুখী বলে দাবি করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎকালে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি শামস মাহমুদ এসব কথা বলেন।

শামস মাহমুদ বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের হার ২০১৯ সালের নভেম্বরে ছিল ৯.৮৭%। নি¤œহারের মূল কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটানোর জন্য ব্যবসা-সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাংকঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য তফসিল ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর করার জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমাতে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বের করতে হবে বলে জানান তিনি।

এসএমই খাতকে দেশীয় শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের রফতানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ঋণ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ডিসিসিআই সভাপতি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর সরকারের ঋণ গ্রহণের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পে বিকল্প উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারে বন্ড প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এক্ষেত্রে টাকার অবমূল্যায়নের চেয়ে সম্ভাবনাময় রফতানিমুখী খাতগুলোর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নগদ প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশিরভাগ ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। অর্থনীতি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সব জনগণের অবস্থার উন্নয়নে সরকার সিঙ্গেল ডিজিট হারে ঋণ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আগামী ১ এপ্রিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। খেলাপি ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণে আইনে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। তবে কোনো উদ্যোক্তা যদি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস সংযোগ অথবা ব্যাংক ঋণ প্রভৃতি সেবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না পেয়ে যদি কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হন, সেটি বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে তিনি সত্যিকারের ঋণ খেলাপি চিহ্নিতকরণে ব্যাংকগুলোর যত্নবান হওয়া আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন।

বন্ড মার্কেট বিষয়ে ফজলে কবির বলেন, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্ট্যাম্প ডিউটির প্রত্যাহার করেছে, যা বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। দেশে একটি সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট চালু একান্ত জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম অ?্যাডভাইজর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং ইকোসিস্টেম, সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশে ব্যাংক প্রতিনিয়ত নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close