নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে আরো ৯০ দিন সময়

বিশেষ নীতিমালার আওতায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করার জন্য আরো ৯০ দিন সময় দিল সরকার। এ-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের গত ৩ নভেম্বরের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে সার্কুলার জারির দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিন ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন ঋণগ্রহীতারা। আদেশে বলা হয়, ১৬ মে জারি করা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ সুবিধা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি আইনত বৈধ। এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ আরো ৯০ দিনের জন্য বাড়াতে পারবে কর্তৃপক্ষ। খেলাপিদের নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে আবেদন করতে হবে।

এদিকে, গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়, পুনঃতফসিলের জন্য এরই মধ্যে গৃহীত আবেদন আগামীকাল পর্যন্ত নিষ্পত্তি করা যাবে। তবে এ সময়ে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করতে পারবে না। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আগামী ৯০ দিন আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া বাকি সব নিয়ম আগের মতোই বহাল থাকবে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, ৯ শতাংশ সুদ ও এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে গত ১৬ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এরই মধ্যে বিশেষ নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদনের সময়সীমা ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নীতিমালা জারি করা হলো।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি নিয়ে গত ৩ নভেম্বর দেওয়া রায়ে, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা বহাল রাখার কথা বলা হয়। উচ্চ আদালত বিশেষ সুবিধা-সংক্রান্ত ওই সার্কুলারের মেয়াদ আরো ৯০ দিন বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রায়ে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণের সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা উচিত। বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতা ও সমালোচনার পরও খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রীর সুপারিশে গত ১৬ মে ঋণখেলাপিদের অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন ট্রেডিং (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজশিল্প, লোহা ও ইস্পাতশিল্প খাতের ঋণখেলাপিরা। এসব খাতের খেলাপি গ্রাহকরা সরাসরি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন। অন্য খাতের ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল সুবিধা পেতে হলে ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটের বিশেষ নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা পাবেন। কেস-টু-কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছরের জন্য গ্রেস পিরিয়ডও পাওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রথম এক বছরে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না খেলাপিদের। মওকুফ হবে অনারোপিত সুদের সম্পূর্ণ অংশ ও ইন্টারেস্ট সাসপেন্সেস হিসেবে রক্ষিত সুদও।

ঋণ স্থিতির (মওকুফ অবশিষ্ট) ওপর কস্ট অব ফান্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ সুদ যুক্ত করা যাবে। তবে ঋণের সুদহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানের ঋণখেলাপিরা বিশেষ এ সুবিধা পাবেন। পুনঃতফসিলের পর ঋণখেলাপিরা নিতে পারবেন নতুন ঋণও। এসব সুযোগ-সুবিধা পেতে সার্কুলার জারির দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close