নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ আগস্ট, ২০১৯

১০ হাজার ইএফডি মেশিন কেনার কার্যাদেশ দিল এনবিআর

মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে প্রযুক্তিনির্ভর ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন কেনার কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রথম দফায় দশ হাজার ইএফডি মেশিন কেনার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। দশ হাজার ইএফডি মেশিন কেনায় সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৩১৭ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে এক লাখ মেশিন কেনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ইএফডি মেশিন চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে দশ হাজার মেশিন কেনার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। চীনভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজেডজেডটি মেশিন সরবরাহ করবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মেশিন পাওয়া যাবে। এরপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এগুলো সরবরাহ করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ব্যবসায়ীদের কাছে ইএফডি মেশিন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। ইএফডি ব্যবহার করলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ভ্যাট হিসাবের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পার্লার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব ব্যবসায় কাগজে-কলমে হিসাব রাখার দিন শেষ। সেজন্য এখন থেকে ২৪ ধরনের ব্যবসায় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই মধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে হবে। অর্থাৎ নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী বার্ষিক লেনদেন ভ্যাটমুক্ত সীমার ওপরে উঠলেই ইএফডি ব্যবস্থা থাকতে হবে।

যেসব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মেশিন লাগাতে হবে, সেগুলো হলো আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান, ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স, মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা, কমিউনিটি সেন্টার, মিষ্টান্ন ভান্ডার, স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং সোনা-রুপার দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী, আসবাব বিক্রয়কেন্দ্র, কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস, বিউটি পার্লার, হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার, কোচিং সেন্টার, সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব, তৈরি পোশাকের দোকান, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, শপিং সেন্টার ও শপিংমলের সব সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ, বড় ও মাঝারি ব্যবসা (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান, যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল এবং সিকিউরিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।

এনবিআর বলছে, এত দিন ধরে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে সারা দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহার হতো। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত এই ইএফডি মূলত ইসিআরের উন্নত সংস্করণ।

জানা যায়, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য ও সেবা খাত থেকে যে পরিমাণ ভ্যাট রাজস্ব আয় হওয়ার কথা ছিল ইসিআরের মাধ্যমে সে অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হয়নি। তবে ইএফডি মেশিনে ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ যেমন নেই তেমনি ব্যবসায়ীদের হয়রানিরও সুযোগ নেই। কেননা এই যন্ত্রটি এনবিআরের সার্ভারে সরাসরি যুক্ত থাকায় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বিক্রয়ের তথ্য সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে চলে আসবে। এ কারণে একবার ইএফডিতে ইনপুট দেওয়া হলে সেই তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। ইসিআর মেশিন অফলাইন হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের তথ্য আড়াল করার সুযোগ থাকে। আবার যেসব ব্যবসায়ী এনবিআরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ইসিআর ব্যবহার করেন না, তাদের অনেক ফিচার অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে ভ্যাট আদায়ে ইসিআরের তুলনায় ইএফডি মেশিন অনেক বেশি কার্যকর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close