নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ জুলাই, ২০১৯

রিজার্ভ চুরি : ফিলিপাইনকে চাপ দেবে এপিজি

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনের ওপর চাপ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। সংস্থাটি বলছে, কোনো দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন পুরোপুরি পরিপালন করলে এই টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না। এ থেকে প্রমাণ হয়, ফিলিপাইনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন পরিপালনে বেশ দুর্বলতা রয়েছে। ফিলিপাইন সদস্য দেশ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এপিজি চাপ প্রয়োগ করতে পারে। এ হিসেবে তারা ফিলিপাইনের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। এর কারণ হচ্ছে,বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন দুই দেশই এপিজির সংসদ্য দেশ।

গতকাল অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতিপ্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে এপিজির পরিচালক ডেভিট শ্যানন ও মোস্তফা আকবরের বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা বাংলাদেশকে এ আশ্বাস দিয়েছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইন বাংলাদেশকে ফেরত দিচ্ছে না; এ বিষয়ে এপিজি কিছু বলেছে কিনা- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এটা নিয়েও তারা একটু আলাপ করেছেন। এপিজি বলছে, যেসব দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়গুলো পুরোপুরি পরিপালন না হয়, সেসব দেশে যেমন- ফিলিপাইন; এসব দেশে এগুলো বেশি হয়। সে দেশে যদি মানি লন্ডারিং বিষয়টা পুরোপুরি পরিপালন করা হতো তাহলে টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না।

টাকা ফেরতের জন্য এপিজির মাধ্যমে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবেন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এপিজি দেখবে। কারণ এপিজির প্রত্যেক দেশের জন্য যে কমন ক্রাইটেরিয়াগুলো রয়েছে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ (জাজ) করতে গেলে তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধরা পড়বে।

বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনার জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এ মামলা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরো ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী প্রায় দুই বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) এখনো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কবে আনা যাবে কিংবা আদৌ আনা যাবে কি না, তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close