নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ জুলাই, ২০১৯

‘চামড়াশিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব’

দেশীয় কাঁচামাল আর শ্রমশক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে চামড়াশিল্পের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ জন্য পণ্যের নিখুঁত মান এবং দাম নাগালের মধ্যে আনা গেলে বিশ্ববাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান সম্ভব বলে মনে করেন তারা। পণ্য তৈরিতে কেমিক্যাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানিতে সহজ শর্ত চান খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়ার কদর থাকলেও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা ঠিক তার উল্টো। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেকনাভিওর জরিপ বলছে, চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ২৪০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে রফতানিতে বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক চার পাঁচ শতাংশ। তবে এ খরা কাটাতে পণ্যের নিখুঁত মানে নজর দেওয়ার পরামর্শ খাতসংশ্লিষ্টদের।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার পাশাপাশি চামড়া থেকে তৈরি জুতা, ব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, ওয়ালেট, বেল্ট, মানিব্যাগসহ চামড়ার তৈরি হস্তশিল্প পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। বৈশ্বিক হিসাবে চামড়ার বড় বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ান। তবে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জাপান। শুরু থেকেই এ দেশটি বাংলাদেশে তৈরি চামড়ার জুতায় ‘ডিউটি ও কোটা ফ্রি’ সুবিধা চালু রেখেছে। চামড়াজাত পণ্যের মোট রফতানি পণ্যের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশই যায় জাপানে। এখন বাইরের দেশগুলোতেও দেশে উৎপাদিত জুতার বাজার প্রসারিত করতে চায় বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ৩৫টি মাঝারি ও ২৫টি ক্ষুদ্র ট্যানারি নিয়ে চামড়াশিল্পের যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৩৫টি মাঝারি ট্যানারির মধ্যে অবাঙালি মালিকানাধীন ৩০টি ট্যানারি সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে এসব ট্যানারি লাভজনক শিল্পে রূপ নিতে পারেনি। ফলে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় এসব ট্যানারি পরে ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়। বর্তমানে দেশে ট্যানারির সংখ্যা প্রায় দুই শ।

বর্তমানে চামড়াশিল্প থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় ১১৬ কোটি মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার ও এর আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ১১২ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ ২১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়াশিল্প থেকে আয় হয়েছিল ১৩৮ কোটি এক লাখ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি বায়ারদের আকৃষ্ট করতে তাই বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজন লেদার ফুটওয়্যার, প্রিন্ট টেক ও গার্টেক্স প্রদর্শনী। যেখানে তুলে ধরা হয় চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল, তৈরি পণ্য ও পণ্য তৈরির আধুনিক যন্ত্রপাতি। এই মেলার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন বায়ারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ঘটেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ খাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা। শিল্পপতিরা যদি বাইরে থেকে মেশিন এনে এ দেশে তৈরি করে আমরা ভালো পণ্য তৈরি করতে পারি। কেমিক্যাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানিতে কাস্টমস ফি একটু কমালে আরো স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহ সম্ভব বলে মনে করেন বিক্রেতারা। চামড়া খাত উন্নয়নে আমদানিনির্ভর না হয়ে উৎপাদনমুখী যন্ত্রপাতি তৈরিতে সরকারকে নজর দেওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close