নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জুন, ২০১৯

নিম্ন আয়ের মানুষের উন্নয়নে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি

বন্যা, নদীভাঙন এবং গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে না পেরে এবং অন্য কোনো আয়মূলক কাজ না পেয়ে গ্রাম থেকে মানুষ বস্তিতে আসতে বাধ্য হয়। বস্তিবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের আবাসন এবং কর্মসংস্থানের সংকট। তাই শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থাসহ নগরের বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের উন্নয়নের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন পবা।

গতকাল ‘জাতীয় বাজেট ও নগরের বহিমশবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ প্রস্তাব করে সংগঠনটি। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন পবা যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি হলে মাথাপিছু গড় ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০,৭৭৬ টাকা। কিন্তু এই বাজেটে নগর দারিদ্র্য মানুষের কথা কোনো স্থানেই সুস্পষ্টভাবে স্থান পায়নি। ঢাকা শহরে প্রায় ৫ হাজার বস্তি রয়েছে।

বারসিকের গবেষণায় দেখা যায়, বন্যা, নদীভাঙন এবং গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালাতে না পেরে এবং অন্য কোনো আয়মূলক কাজ না পেয়ে গ্রাম থেকে মানুষ বস্তিতে আসতে বাধ্য হয়। বস্তিবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের আবাসন এবং কর্মসংস্থানের সংকট। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন এবং সামাজিক নিরাপত্তা কোনোটাই নগরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিশ্চিত হয়নি। নগরের বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দরকার এবং এর প্রতিফলন এ বছর থেকেই হওয়া জরুরি। বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের বিশাল অংশকে উন্নয়নের সাথি না করে কোনোভাবেই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষরা নিজেদের রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন। বাজেটে সব মানুষের চাহিদার প্রতিফলন থাকতে হবে। কিন্তু গরিব, মেহনতি ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো বাজেট হয় না। সংবিধান থেকে শুরু করে নির্বাচনী ইশতেহার সর্বত্র গরিব মেহনতি মানুষের উন্নয়নের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো শহরের বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষরা অধিকারবঞ্চিত ও নিষ্পেষিত। বস্তিবাসীর আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের জন্য জাতীয় বাজেটে নির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রতিজন বস্তিবাসীর জন্য সরকারিভাবে ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পরিচয় কার্ড দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সব উন্নয়ন উদ্যোগ একইভাবে সবার জন্য কাজে লাগছে না। শহর ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষরা সবচেয়ে অবহেলিত। তাই তাদের জন্য পৃথক উন্নয়ন উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা। এ সময় তিনি সব বস্তিবাসীর জন্য সহজশর্তে ব্যাংকঋণ ও ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার দাবিও জানান। এ ছাড়া বৈঠকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে অংশগ্রহণকারীরা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো, বস্তিবাসীর জন্য সরকারিভাবে সহজশর্তে আবাসনের ব্যবস্থা করা। তাদের সব কাজের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে বেতন কাঠামো ও উৎসব-ভাতা নির্ধারণ করা এবং মর্যাদাপূর্ণ কাজের ব্যবস্থা করা। বস্তির শিশুদের জন্য আনুপাতিক হারে সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানবান্ধব প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা। বস্তিবাসীর জন্য ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ব্যবস্থা করা। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সহজশর্তে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা। বস্তিবাসীর জন্য আলাদা পরিচয়পত্র বা কার্ডের ব্যবস্থা করা। নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ন্ত্রণে ও তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, যেমনÑ বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় তাদের যুক্ত করা। নিম্ন আয়ের মানুষদের মালিকানায় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বিনামূল্যে তাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নগর দারিদ্র্য বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর আলম, গবেষক পাভেল পার্থ, বারসিক প্রতিনিধি সুদিপ্তা কর্মকার, নৃবিজ্ঞানী সৈয়দ আলী, বস্তিবাসী ইউনিয়নের নেতা কুলসুম বেগম, রাফেসা বেগম, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close