শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

  ২৪ জুন, ২০১৯

আসন্ন ঈদুল আজহা

চট্টগ্রামে ‘রকেট’ গতিতে বাড়ছে মসলার দাম

মুসলমানদের কোরবানির ঈদ পবিত্র ঈদুল আজহা ক্রমেই এগিয়ে আসছে। আর মাত্র দেড় মাস পরই ধর্মীয় উৎসব এই ঈদ। কোরবানি ঈদে পশুর মাংসে ব্যবহৃত অন্যতম উপাদানগুলো হচ্ছে এলাচ, দারুচিনি, মরিচ ইত্যাদি। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে দু-একটি মসলার দাম এখন থেকেই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ক্রেতারা বলছেন মসলার এ মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ঈদ ঘনিয়ে আসার আগেই বাকি সব কয়টি আইটেমের মূল্য ‘রকেট গতিতে’ বেড়ে যাবে। এখন থেকেই জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থাসহ অন্য সংস্থাগুলোর বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা ও বাজার বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যতম মসলা উপাদান এলাচের মূল্য যেখানে রমজানে ছিল ১৭০০ থেকে ১৭৫০ টাকা কেজি, সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ থেকে ২২৬০ টাকায়। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা। অপরদিকে দারুচিনি যেখানে ছিল ২৮০ টাকা তা ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৫ থেকে ৩৫০ টাকায়। পোস্তদানা কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়ে ১৪০০ থেকে ১৫৫০ টাকা। জায়ফল কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। দেশীয় মরিচের মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মিষ্টি ঝাল মরিচের দাম কেজিতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৬৫ টাকায়, দেশীয় অন্যান্য স্থানের মরিচ কেজি ১১০ থেকে ১৩০ ও ভারতীয় মরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের পরিচালক চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়ৎদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সোলায়মান বাদশা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও কম মূল্যে আমরা পাইকারিতে এসব মসলা বিক্রি করছি। রমজানের সময় আমদানি করেছিলাম বিধায় আন্তর্জাতিক বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়েও কমে আমরা বিক্রি করছি।’

চাহিদার চেয়ে মজুদ কম হলেও মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানান তিনি।

আমদানিকারকদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। আবার চাহিদার তুলনায় দেশে মজুদের পরিমাণ কম থাকাকেও এর অন্যতম কারণ বলে দাবি করছেন তারা।

সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব মফিজুর রহমান চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সব স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেশে চাহিদা অনুপাতে পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকায়ও তিনি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ফোরামে যতটুকু চাহিদা সে অনুপাতে পণ্যগুলো আমদানি করতে বলেছেন। চাহিদা অনুপাতে আমদানির ব্যাপারে আমদানিকারক সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘আমদানি করতে এলসি খুলতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই অনেক ব্যবসায়ী আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’ খাতুনগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়ৎদার কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন প্রতিদিনের সংবাদকে মসলার মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ দেখেন না জানিয়ে বলেন, ‘চাহিদা অনুপাতে প্রচুর পরিমাণে মসলা জাতীয় পণ্য মজুদ আছে।’ নগরীর বহদ্দারহাটে খুচরা বাজারে গতকাল রোববার সরেজমিন গিয়ে পাইকারি বাজারের মসলার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। বহদ্দারহাট বজল স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, এলাচ কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়ে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ৫০-৭৫ টাকা বেড়েছে। বজল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন ইমন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় খুচরা বাজারে তো দাম বাড়বেই।’

বহদ্দারহাট বাজারে গতকাল রোববার কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে প্রতিবেদকের আলাপ হয়। স্থানীয় ক্রেতা বহদ্দারহাটের বাসিন্দা ইসহাক সওদাগর বলেন, ‘কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই দেখবেন মসলার বাজারে আগুন। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এসব মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।’ এদিকে অন্যান্য মসলার মধ্যে ভারতীয় হলুদের দাম কেজিতে ৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৭ টাকা। আর বাংলাদেশি হলুদ ৯০ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন কমে ২০-২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু দিন আগেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিতে ৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এটিও উঠানামা করছে। ঈদ ঘনিয়ে আসলে আবারো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ক্রেতাদের। আদা কেজি ১১০ ও রসুন ১১২ টাকা। তবে জিরার দাম বাড়েনি কেজি ৩০০ টাকায় রয়েছে পাইকারিতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close