নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা

আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ রেলপথ হবে চীনের ঋণে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির জন্য চীনের কাছ থেকে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বা ১২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার ঋণ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

প্রকল্পটির আওতায় ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। এর মধ্যে ১৭৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মূল রেলপথ ও ৬২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে। এ রেলপথের ডিজাইন স্পিড ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য শিগগিরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।

তথ্য মতে, আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েলগেজে রূপান্তরের চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ তথা ১২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার ঋণ চাওয়া হয় চীনের কাছে। চুক্তি মূল্যের বাকি অর্থ ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ ৫ হাজার ৪১০ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করবে। সম্প্রতি ঢাকার চীনা দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কনস্যুলার বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে রেলভিত্তিক আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপন এবং রেলওয়ের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার আখাউড়া-সিলেট রেলপথটি মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরে আগ্রহী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরাসরি চীনের ঠিকাদার নিয়োগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য প্রকল্পটির প্রাথমিক উন্নয়ন প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) অনুমোদন করা হয়েছে।

২০১৬ সালে চীনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুই দিনের সফরে দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়। এর আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের ঋণ গ্রহণে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে ঋণ প্রস্তাবের সঙ্গে পিডিপিপি, প্রাথমিক পরিবেশগত পরীক্ষা (আইইই) প্রতিবেদন, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) প্রতিবেদন ও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন সংযোজন করা হয়েছে। এগুলো বিবেচনায় ঋণ প্রদানের বিষয়টি দ্রুত চূড়ান্তের প্রস্তাব করা হয়।

পিডিপিপির তথ্য মতে, সারা দেশের সব রেলপথ পর্যায়ক্রমে মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সংযোগ রেলপথ ডুয়েলগেজ করা হবে। এরই মধ্যে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ অংশটি ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের অন্তর্ভুক্ত। তবে কুলাউড়া থেকে আখাউড়া ও সিলেট পর্যন্ত রেলপথ এখনো মিটারগেজ। তাই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর জরুরি।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, রেলপথ নির্মাণে মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২৮৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে দর সমন্বয় যুক্ত হবে ২৭ শতাংশ। আর অনিশ্চিত ব্যয় রয়েছে আরো দুই শতাংশ। রয়েছে অন্যান্য খাতের ব্যয়ও। সব মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এদিকে ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের অন্যান্য প্রকল্পেও ব্যয় আখাউড়া-সিলেটের চেয়ে অনেক কম। এর মধ্যে রয়েছে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। এতে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

আবার আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত বিদ্যমান ৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন আরো ৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ কাজের চুক্তি মূল্য ৩ হাজার ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এতে নতুন রেলপথ নির্মাণসহ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

নতুন রেলপথ নির্মাণের চেয়ে আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পটিতে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আখাউড়া-সিলেট রেলপথটি পাহাড়ি ও ঢালু। এতে মাটির কাজও বেশ জটিল। আবার বিদ্যমান রেলপথের পাশে অস্থায়ী লাইন করে ট্রেন চলাচল চালু রাখতে হবে। পরে নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। এরপর অস্থায়ী অংশ ভাঙতে হবে। এসব কারণে ব্যয় অনেক বেশি হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close