নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্প পাবে বিশেষ সুবিধা

দেশের মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্পকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। স্থানীয়ভাবে মোটরগাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এনবিআর বলছে, ‘কেবল কাস্টমস ডিউটি বহাল রেখে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে অব্যাহতি এবং স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর থেকেও অব্যাহতি প্রদান করা যেতে পারে।’

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন। তবে এরই মধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়েছেন। বিষয়টি তাকেও অবহিত করা হবে।’

এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত পিএইচপি অটোমোবাইলস লিমিটেডের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে গাড়ি উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে এবং স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক হতে অব্যাহতি দিয়ে এ শিল্পকে প্রণোদনা প্রদানের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

এনবিআরের প্রস্তাবে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ তে অটোমোবাইল শিল্পকে অগ্রাধিকারভুক্ত শিল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলেও প্রকৃত উৎপাদকারী হিসেবে এত দিন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি বিধায় সরকার কোনো প্রণোদনা বা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট অনুশীলন পর্যায়ে জানা যায় পিএইচপি অটোমোবাইলস এবং র‌্যাংগস অটোমোবাইলস এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রটোন এবং মিৎসুবিশি ব্র্যান্ডের নতুন গাড়ি বাংলাদেশে সংযোজন ও উৎপাদনের লক্ষ্যে বিপুল বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করেছে। এছাড়া প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজও দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে।’

তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে এনবিআর বলেছে, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারা দেশে ৯০ হাজার ৫৫৩ ইউনিট বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ প্যাসেঞ্জার ভেহিক্যাল আমদানি করা হয়। অর্থাৎ, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৯৩ ইউনিট প্যাসেঞ্জার ভেহিক্যাল আমদানি করা হয়। এই প্যাসেঞ্জার ভেহিক্যালের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৪ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড। মাত্র ১৩ শতাংশ নতুন গাড়ি আমদানি করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। কেননা, নতুন গাড়ির তুলনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে অধিক পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয় এবং অধিক পরিমাণ কার্বনও নির্গত হয়।’

নতুন এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ি সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (কমপ্লিটলি বিল্ড আপ-সিবিইউ) এবং সম্পূর্ণ বিযুক্ত অবস্থায় (কমপ্লিটলি নকড ডাউন-সিকেডি) আমদানির ক্ষেত্রে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত বর্তমানে বলবৎ শুল্ক-কর কাঠামো রয়েছে। সিবিইউ ১৬০০ সিসি গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বমোট করভার ১৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৬০০ সিসি পর্যন্ত সিকেডি গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বমোট করভার ৯১ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ১৮০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড সিবিইউ গাড়িতে সর্বমোট কর রয়েছে ৯১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এনবিআর বলছে, হাইব্রিড গাড়ির সঙ্গে সম্পূর্ণ বিযুক্ত গাড়ি (সিকেডি) আমদানির ক্ষেত্রে মোট করভারের কোনো পার্থক্য নেই। সিবিইউ গাড়ির সঙ্গে মোট করভারের পার্থক্য কেবল ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ কারণে বাংলাদেশে সিকেডি অবস্থায় গাড়ি আমদানিপূর্বক সংযোজন বা উৎপাদনের কারখানা গড়ে ওঠেনি। কেননা গাড়ির কারখানায় যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন বর্তমানে বলবৎ শুল্ক-কর কাঠামো সেটিকে উৎসাহিত করে না। ফলে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশের জন্য শুল্ক প্রণোদনা প্রদান যৌক্তিক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close