নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

‘খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ হলেই অ্যাকশনের পরামর্শ থাকবে’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমাদের আর্থিক খাতে সুশাসনের তেমন অভাব না থাকলেও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ অনেক বড় সমস্যা। খেলাপি ঋণ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান করা অনেকটাই কঠিন। তিনি বলেন, যেকোনো দেশে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে রাখাটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমাদের আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। যা আগামী সরকারের জন্য রেখে যাওয়া হবে। সেখানে ১০ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেই অ্যাকশনে যাওয়ার পরামর্শ থাকবে। গত সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। তাই অপ্রাপ্তির বিষয়গুলো অতটা চোখে পড়ে না। একটি ইচ্ছা ছিল জেলা বাজেট করে যাওয়ার। সেটা পারিনি। তবে এর জন্য একটি পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী যেকোনো সরকার জেলা বাজেট করতে চাইলে এটা অনুসরণ করে করতে পারবেন। এই ১০ বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় জনগণ এবং ব্যবসায়ীরা আর অরাজকতা চায় না। এখন এমন কিছু ঘটলে ব্যবসায়ীরাই তার ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করেন তিনি।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে মুহিত বলেন, এক সময় ব্যাংকিং খাত সরকারি ছিল। এখন ব্যাংকিং খাত ব্যক্তিমালিকানায় অনেকটা প্রসারিত। ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানা খাতেই হয়ে থাকে। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়। এখন আর সেটা নেই। এ ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমানে দেশে তিনটি নতুন ব্যাংকসহ ৬০টি ব্যাংক রয়েছে। এজন্য আগামীতে নতুন কোনো ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হবে না। এজন্য একটি নির্দেশনা দিয়ে যাব। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নতুন কোনো ব্যাংক আর অনুমোদন দেওয়া হবে না। বরং যারা খারাপ করবে তাদের একীভূত করা হবে।

তিনি বলেন, দেশে সরকারি ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক রেখে বাকিগুলো বেসরকারি খাতে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকের অবস্থা ভালো না হওয়ায় সেটা করা যাবে না। আর সোনালী ব্যাংকের অবস্থার একটু উন্নতি করতে হবে। এজন্য ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি পরামর্শ দিয়ে যাব। সেটাতে অনেক কিছুই থাকবে। আমি আগামী ৫ বছরের জন্য একটি প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে তাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হবে। যারা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না তাদের অবসায়ন বা একীভূতকরণ করা হবে। এছাড়া ব্যাংকিং কমিশনসহ আর্থিক খাতের উন্নতিতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের আর্থিক খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দিন থেকেই চেষ্টা করছে। এজন্য কিছু প্রস্তাবও থাকবে আমার প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ মামলার জন্য আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। কারণ দ্রুত সময় কমে যাচ্ছে। আমাদের আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।

গত ১০ বছরে দেশের অবস্থা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ আমি খুব খুশি, গত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে। এজন্য আমি বেশি বেশি করে চাই আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসুক। তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। আমি আশা করি, পরবর্তী সরকারের আমলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি দারিদ্র্য নির্মূল কার্যক্রমও চলমান থাকবে। আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না, দারিদ্র্যবিমোচনের কাজ বন্ধ হবে না। কারণ বিগত ১০ বছর ধরে দারিদ্র্য নির্মূলে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশে ৩ কোটি দরিদ্র রয়েছে, যা ক্রমান্বয়ে কমছে বলে জানান তিনি রাজনীতিতে অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সব খাতে অবসর আছে। তাই রাজনীতিতেও অবসরে যাওয়া সুযোগ থাকতে হবে। এজন্য তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে দেশের রাজনীতিবিদরা অবসরের বিষয়টি বুঝতে চান না।

রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত যে, অবসর একটা বিষয় আছে। এখনো তার চেয়ে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি রাজনীতিতে রয়েছেন এবং থাকতে চান। সাবেক দুই রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। ওনাদের রাজনীতিতে থাকা না থাকা তাদের ইচ্ছা। রাজনীতিতে থাকা আমার আর ইচ্ছা নেই। ৮৫ বছর বয়স হয়েছে। অবসরের জন্য যথেষ্ট।

আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে থাকবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সম্ভাবনা কম। তবে আওয়ামী লীগে থাকছেন। তিনি বলেন, এজন্যই তো অবসরে যাচ্ছি। সরকারি কাজে দীর্ঘদিন কাটিয়েছি। এত দীর্ঘদিন কাজ করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য আমার এখন অবসর জরুরি। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে মুশকিল যেটা হয়, নো বডি ওয়ান্ট টু রিজাইন।

গত ১০ বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে যেসব সাংবাদিক তার সংবাদ পরিবেশন করেছেন তিনি তাদের কাজের প্রশংসা করেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকেদের ধন্যবাদ জানান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের প্রকাশিত সংবাদ আমাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সাহায্য করেছে। অনেক জটিল বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমি উপকৃত হয়েছি। এ সময় অর্থমন্ত্রী তার দীর্ঘ কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close