নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮

শিল্প কৃষিসহ সব খাতে উৎপাদনশীলতা ক্রমেই বাড়ছে : শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন,বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম উৎপাদন বাড়ানোর ধারণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে শিল্প, সেবা, কৃষিসহ সকল খাতে উৎপাদনশীলতা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান তিনি।

গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) আয়োজিত ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে বেতার-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, কারখানা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৮০ ভাগের মালিক আপনারা। এখন উৎপাদন বাড়িয়ে সকলে মিলে কাজ করে এ কথাটাই বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে হবে-বাঙালি জাতি স্বাধীনতার পবিত্র আমানত রক্ষার উপযুক্ত।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শ্রমিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ তোমাদের বারবার বলছি, এখনো বলছি প্রোডাকশন বাড়াও। আমরা যদি সকলে মিলে কঠোর পরিশ্রম করে কলে-কারখানায়, খেতে- খামারে উৎপাদন বাড়াতে পারি, তবে ইনশাল্লাহ আমাদের ভাবী বংশধরদের শোষণমুক্ত সুখি ও সমৃদ্ধশালী ও ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পারব।

আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সরকার সব সময় ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। সিআইপি (শিল্প), সিআইপি (বাণিজ্য), সিআইপি (প্রবাসী কল্যাণ), রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার, জাতীয় রফতানি ট্রফি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সেরা উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান পুরস্কারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যবসায়ী/শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য পুরস্কার প্রদান বর্তমান সরকারের উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, উৎপাদনশীলতার সঙ্গে কোয়ালিটি শব্দটি অঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত। কোয়ালিটি বা মান বৃদ্ধির জন্য একই সাথে গুণগত মানের পণ্য, দক্ষ মানবসম্পদ ও কোয়ালিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি এই তিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তা হলেই পণ্যের গুণগত মান এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় জাতীয় গুণগতমান পণ্য ও সেবা নীতিথ২০১৫ প্রণয়ন করেছে। এর আলোকে জাতীয় মান অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। মান নির্ধারণ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর শ্রেষ্ঠ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে জাতীয়ভাবে ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে নির্দেশনার আলোকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান এনপিও ৬টি ক্যাটাগরিতে এবার ১৬ প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাকে পুরস্কৃত করছে। এ ছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয় শ্রেষ্ঠ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান করে আসছে। এই উদ্যোগের ফলে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা আন্দোলন বেগবান হবে বলে আমি আশাবাদী।

বাংলাদেশে শিল্প, সেবা, কৃষিসহ সকল খাতে উৎপাদনশীলতা ক্রমেই বাড়ছে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আমাদের রফতানি আয় এখন ৩৬ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এটি ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চতুর্থ শিল্প না, এর শিল্পায়নের নতুন ধারণা চলছে উল্লেখ করে আমু বলেন, রোবটিক টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো-টেকনোলজি, বায়ো-টেকনোলজি ইত্যাদি প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প খাতে যে অসাধারণ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে তাই হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনিবার্য ফল। এ বিপ্লবের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের ধারা জোরদার হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানির ব্যবহার করে শিল্প-কারখানায় সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়াস চলছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনায় মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পণ্য ও সেবার উৎপাদন হচ্ছে। ২০১২ সালের মধ্যে শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এই শিল্প বিপ্লবেরই প্রতিচ্ছবি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, এনপিওর পরিচালক এসএম আশরাফুজ্জামান। এ ছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিল্প-কারখানায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যে উৎকর্ষতা সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানসহ ১৬টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close