নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

বই প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী

কর অব্যাহতি কমানো দরকার

রাজস্ব বাড়াতে কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, কর অব্যাহতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কর অব্যাহতি কমানো দরকার অথবা কোনো বিষয়ে কর ছাড় হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সাংবাদিক আবু কাওসারের লেখা ‘রাজস্ব ভাবনা : যেতে হবে বহু দূর’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এনবিআর সদস্য (আয়কর) জিয়া উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিসহ এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন, আলী আহমদ, আমিনুর রহমান, সৈয়দ মো. আমিনুল করিম ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বইটিতে এনবিআরের কয়েকজন সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা এনবিআরের আমূল সংস্কারের প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এনবিআরের সংস্কার আনতে আরো দুইটি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে ট্যারিফ মূল্যকে বিদায় করা অথবা দারুণভাবে কমিয়ে আনা এবং সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়নে যে দুর্বলতা আছে সেটি কমানো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এনবিআর শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে পারে। প্রতি বছর কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের দিয়ে সার্ভে করাতে পারে। তারা ফিরে এসে যে রিপোর্ট দেবে, যাদের করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলবে, এনবিআর তাদের করের আওতায় নিয়ে আসবে।

মুহিত বলেন, দেশের অনেক আইনকানুন ভালো। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয় বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে। এজন্য শুধু সংস্কার বা পুনর্গঠন করলেই রাজস্ব আয় বাড়বে তা নয়। সংস্কার ছাড়াও নীতি, সিদ্ধান্ত ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব। এজন্য সরকারের বাস্তবায়নে যে দুর্বলতা তা দূর করতে হবে।

প্রকাশিত বই সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, যতদূর জানা গেছে, রাজস্ব নিয়ে এ রকম বই বাংলা ভাষায় আর দ্বিতীয়টি নেই। বইটিতে পাঁচটি অধ্যায়ে রাজস্বের বিভিন্ন সূত্র নিয়ে ব্যাখ্যা ও হিসাব দেওয়া হয়েছে। শেষ অধ্যায়ে ১৩টি সাক্ষাৎকার রয়েছে। এসব সাক্ষাৎকার যারা দিয়েছেন তারা সবাই রাজস্ব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।

তিনি বলেন, আমি বইটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ব। পরের সরকারে অর্থমন্ত্রীর জন্য যে পরামর্শ রেখে যাব, সেটি তৈরিতে এ বইটা সহযোগিতা করবে। বইটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে লেখক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, শুধু কঠোর পদক্ষেপ নিলেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে তা নয়। এমনভাবে কর নির্ধারণ করতে হবে যাতে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজ করে। অতিরিক্ত উৎপাদন থেকে কর দেওয়া যায়।

তিনি বলেন, রাজস্বের বড় দুর্বলতা কর হার। বর্তমানে একাধিক হারে কর আদায় হয়। এটাকে একক হারে নিয়ে আসতে হবে। একক হারে বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও হিসাব সহজ বলে জানান তিনি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব বোর্ডই হতে হবে, কোনো সরকারি অফিস নয়। এখানে চেয়ারম্যান হতে হবে এনবিআরের কর্মকর্তা থেকেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে পারে না। মান্ধাতা আমলের মতো ভবন ভাড়া নিয়ে কর আদায় করা যাবে না, অঞ্চলভিত্তিক নিজস্ব ভবন গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধূরী বলেন, এনবিআরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এলটিইউ ভাগ করা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, কর ব্যবস্থার সংস্কার দরকার। দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা দ্রুত ধনী হচ্ছেন। তিনি অতি ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের প্রস্তাব করেন।

দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়া এনবিআরের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকলে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমদ বলেন, রাজস্ব খাতে সংস্কার দরকার। তার চেয়ে বেশি দরকারমুক্ত স্বাধীনভাবে কথা বলা ও লেখার সুযোগ নিশ্চিত করা। বইটিকে তিনি রাজস্ব বিভাগের জন্য সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন।

সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, এ পর্যন্ত এনবিআরের যেসব সংস্কার কাজ হয়েছে, সেগুলো খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা যায়নি।

বইটি লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে বলতে গিয়ে লেখক আবু কাওসার বলেন, বর্তমান রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার দরকার। সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, অর্থনীতির মতো নিরস শাস্ত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে বহু কষ্ট সইতে হয়েছে।

বছরে এখনো কর ফাঁকির পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা। দেশে করযোগ্য অনেক রাজস্ব আছে কিন্তু আদায় করা যাচ্ছে না।

আবু কাওসার সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক বিষয়ে সাংবাদিকতা করছেন। মেলা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করেছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close