নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

আয়কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

৪ কোটি মানুষের কর দেওয়া উচিত

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হিসেবে বর্তমানে করদাতার সংখ্যা এক কোটি। তবে উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৬ কোটি মানুষের দেশে অন্তত চার কোটি মানুষের কর দেওয়া উচিত। কারণ সবাই কর দিলে দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করা আরো সহজ হতো বলে মনে করেন তিনি। এদিকে প্রথম দিন আয়কর সংগ্রহ হয়েছে ২১৮ কোটি ৪২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮ টাকা। গতকাল রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলা-২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও মেলার সমন্বয়ক এনবিআর সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমাদের উন্নয়ন যেভাবে ধাবিত হচ্ছে এক কোটি করদাতা নিয়ে আমরা এখন সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই, এই এক কোটির সঙ্গে আরো কয়েক কোটি এখানে যুক্ত হোক। এটি অন্তত চার কোটি হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ধরেন চার কোটি মানুষ কর দেয়। তাহলে আমাদের যে সুবিধাটা হবে সরকার যে বিভিন্ন ধরনের সেবা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করে, তা নানাভাবে ব্যাপ্তি পাবে। আগে আমরা কর আদায় করতাম ৭ লাখ। সব মিলিয়ে তখন ১৫ লাখ করদাতার বেশি ছিল না। এখন করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে এখন প্রায় এক কোটি মানুষ কর দেয়। আর অনেক ধরনের কর রয়েছে। সেগুলোকে ধরলে এক কোটি মানুষ আজকে কর দেয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি করদাতা।’

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘একসময় ছিল যখন কর দিতে আমাদের খুব অনীহা ছিল। সবাই মনে করত আজ কর দিলাম, সারা জীবন একটি ফাঁদে পড়ে গেলাম। তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন অসংখ্য যুবক এসে লাইন ধরে কর দেয়। এটা আমাদের জাতির জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে হবে। সারা দেশে একটা একক অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছে। একক অর্থনীতির সৃষ্টি হওয়ার ফলে অর্থনীতির গতি এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য, তা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ বৈষম্য এখনো আছে। কিন্তু সেটা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যখন জন্ম হয়, তখন আমাদের দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ লোক গরিব ছিল। এখন আমরা বলি গরিবের সংখ্যা ২২ শতাংশ। এই ৭০ থেকে নামিয়ে আমরা ২২ শতাংশে নিয়ে এসেছি। অর্থাৎ সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ২২ শতাংশ কম নয়। আমাদের দেশে ২২ শতাংশ মানে ৩ কোটি মানুষ। এই ৩ কোটি মানুষকে এখন আমাদের উপরে ওঠাতে হবে। সেটাই হলো আমাদের সরকারের লক্ষ্য। সেটাই আমাদের জাতীয় লক্ষ্য।’

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই নেতৃত্বটা একান্তভাবে জনকল্যাণে নিবেদিত। জনকল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব আছে বলেই আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যেতে পারছি। এই যে দ্রুতগতিতে আমাদের বিকাশ হচ্ছে। সেই বিকাশটা যাতে আরো সুন্দর হতে পারে, আরো উজ্জ্বল হতে পারে, সেটাই আমার আশা।’

এখন আয়কর মেলা উৎসব পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মুহিত বলেন, যারা এখানে কর দিতে এসেছে তাদের বিশেষভাবে অভিনন্দন। আপনারা মেলাটাকে সার্থক করে তুলেছেন। মেলাটা সত্যিকার অর্থেই মেলাতে পরিণত হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মেলায় এসে সাধারণ জনগণ যেসব সুবিধা পান, সহজে যেমন সেবা পান, কর অফিসগুলোতেও একই রকম সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মেলা চলবে। ১৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর।

এদিকে প্রথম দিনেই সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ মেলা প্রাঙ্গণে। মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। হেল্পডেস্ক ও তথ্য কেন্দ্রে করদাতাদের উপচে পড়া ভিড়। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানে সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

প্রথম দিন মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে চলে।

মেলার প্রথম দিন আয়কর সংগ্রহ হয়েছে ২১৮ কোটি ৪২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮ টাকা। মেলার পরিধি গতবছরের মেলার চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইন গ্রহণ (নতুন ও পুরাতন), ই-পেমেন্ট, ই-ফাইলিং, ই-পেমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় আসা মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় করদাতাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজধানীর টিএসসি, রামপুরা, বেইলি রোড, মতিঝিল, মিরপুর ও উত্তরা থেকে ১৫টি শাটল বাস নিয়োজিত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close