নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ নভেম্বর, ২০১৮

কর্মশালায় বিএসইসি চেয়ারম্যান

নির্বাচনের অজুহাতে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল করলে ছাড় নেই

জাতীয় নির্বাচনের অজুহাতে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করা হলে ছাড় নেই। বিষয়টি কড়া নজরদারি করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে আইন লংঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল পুঁজিবাজারের রিপোর্টারদের এক কর্মশালায় বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এসব কথা বলেন। বিএসইসি এবং পুঁজিবাজারের রিপোর্টারদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। বিএসইসির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা, হেলাল উদ্দিন নিজামী, খোন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ ও পরিচালক রেজাউল করিম। সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে বাজারে দরপতন হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা আছে। তবে আমরা বলতে পারি, এ ব্যাপারে বিএসইসি সজাগ আছে। কারা কী করছে, তা সার্ভিলেন্সের মাধ্যমে সব সময়ই নজরদারি করা হয়। তাই কোনো মহল থেকে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খায়রুল হোসেন বলেন, আইপিওতে (প্রাথমিক শেয়ার) কোম্পানিগুলো সঠিক দাম পায় না বলে, দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ ছিল। এরপর বুকবিল্ডিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে দর নির্ধারণ করে। কিন্তু এর মধ্যেও কোম্পানি ও যোগ্য বিনিয়োগকারীরা যোগসাজোশ করতে শুরু করে। যা প্রতিরোধে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ শেয়ারে দর প্রস্তাব করার সংশোধনী করা হয়েছে। এরপরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যোগসাজশের মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ালে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেখানে অসহায়। কারণ যারা অতিরিক্ত মূল্য কোট করছে, তাদেরকে শেয়ার না দিলে বাজারে শৃংখলা নষ্ট নয়। ফলে এখানে আমাদের রয়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান আরো বলেন, উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারে আসতে চাইছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যাংকে কম্লায়েন্স নেই। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যথা সময়ে ফেরত দিতে হবে, এই বিষয়টি নিশ্চিত হলে শেয়ারবাজারের প্রতি উদ্যোক্তাদের নির্ভরশীলতা বাড়বে।

খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁিজ নয়, জ্ঞান শেয়ারবাজারে জয়ী হওয়ার অস্ত্র। বিনিয়োগ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল জ্ঞানভান্ডার তৈরি করা। বিনিয়োগকারীরা যাতে নিজেরাই শেয়ার লেনদেন করে পুঁজির সংরক্ষণ ও মুনাফা করতে পারে। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। তিনি বলেন, প্রকাশিত তথ্যের (ডিসক্লোজার) ভিত্তিতে একটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেয় কমিশন। এক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষক সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিষয়ে সব ঠিক আছে বলে জানানোর পরে কমিশনের কিছু করার থাকে না। কারণ বিএসইসি সরেজমিন ওই কোম্পানির আর্থিক হিসাবের সত্যতা যাছাই করতে পারে না। আর এমনটি করতে গেলে আইপিও অনুমোদনে ৩ বছর সময় লাগবে।

বর্তমানে প্রত্যেকটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রসপেক্টাস প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে জানিয়েছে খায়রুল হোসেন বলেন, এক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা ওই প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত তথ্য নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোন কোম্পানির প্রসপেক্টাসের সঙ্গে বাস্তবতার গরমিল পেলে, আইপিওতে আবেদনের আগ মুহুর্তেও তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানি কাছে চাদাঁ না পেয়ে একটি গ্রুপ আদালতে রিট করে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। এদেরকে প্রতিহত করতে সাংবাদিকদের কাছে আহ্বান করেছেন তিনি। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প, সেবা, অবকাঠামো ইত্যাদি খাত অনেক এগিয়ে যাবে। এ কারণে বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে কোম্পানিতে ২৫ শতাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছে। এদের দায়িত্ব ও করণীয় নিয়ে শিগগিরই কর্মর্শালার আয়োজন করা হবে। এছাড়াও ডিমিউচুয়ালাইজেশনের (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদাকরণ) পর স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বেশি। এসব পরিচালকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করতে কর্মশালার আয়োজন করা হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close