নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

বিআইবিএমে লিডারশিপ বিষয়ক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন

সুশাসনের উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সেমিনারে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। তবে ব্যাংকে কর্মরতদের একটি বড় অংশ জানিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের নেতৃত্ব খুব ভালো এবং আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে যোগ্য নেতৃত্ব ও সুশাসনের উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে ‘লিডারশিপ অ্যাপ্রোসেস অ্যান্ড ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স : দ্য কেস অব দ্য ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। গবেষণা দলে আরো ছিলেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য এসকে নাজিবুল ইসলাম, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক শাকিল এজাজ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম। গবেষণা দল শতাধিক ব্যাংকের শাখা এবং ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর জরিপ করে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী; বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী; সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন; মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সফিউল আজম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। তিনি সেমিনারের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি ব্যাংকিং খাতের নেতৃত্ব এবং কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনার ওপর জোরারোপ করেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের নেতৃত্ব গড়পড়তা এবং সন্তোষজনক। বিশেষ করে ঋণগ্রহীতা চিহ্নিতকরণ, খেলাপি ঋণ আদায়, লক্ষ্য নির্ধারণ, ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকিং, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা প্রণয়ন এবং ব্যাংকারদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বোর্ড সদস্য, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এবং শাখা ব্যবস্থাপকদের নেতৃত্বে ব্যাংক কর্মীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা এবং সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে এটিকে আরো খুব ভালো এবং অত্যন্ত ভালো করার সুযোগ রয়েছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকের দক্ষ এবং কার্যকরী নেতৃত্বের সংকটের কারণে খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট এবং অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব বন্ধ করতে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক অলাভজনক ব্যাংককে অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক করতে পারেন।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকের যারা নেতৃত্ব দেবে তাদের ব্যাংকিং ধারণা স্পষ্ট থাকতে হবে। ব্যাংকিং সম্পর্কে পুরো ধারণা না থাকলে অধস্তনদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। ৯০ শতাংশ সিদ্ধান্ত সঠিক হলে মনে করতে হবে সে ভালো নেতা। সফলতা সবাইকে ভাগ করে নিলে আগামী দিনে কাজে সুবিধা হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভালো সম্পর্ক জরুরি। যোগ্য নেতৃত্বই একমাত্র ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় রোধ করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চপর্যায়ে নেতৃত্বেও সংকট প্রকট। সব কাজে দক্ষতা থাকলেও নেতৃত্বের গুণাবলি না থাকলে কাজে লাগবে না।

সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু বড় ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের জন্য ব্যাংকাররা আংশিকভাবে দায়ী। ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে, এ সময়ে নেতৃত্বের পরিবর্তনও দরকার।

মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল্লাহ আজম বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, বোর্ড এবং ব্যবসায়িক চাপ থাকবে তা মোকাবিলার মতো নেতৃত্ব দরকার। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের না বলার ক্ষমতা থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ ব্যাংকে সুশাসনের ওপর জোরারোপ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close