শাহ্জাহান সাজু

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বছরে পাঁচ কোটি টাকার টার্নওভার

হিসাব সংরক্ষণ করবে এনবিআর

বছরে পাঁচ কোটি বা তার বেশি টার্নওভারের প্র্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বা লেনদেন তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত সফটওয়্যার বা কম্পিউটার সিস্টেমে সংরক্ষণ করতে হবে। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এই আইন পরিপালন না করলে ভ্যাট আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড ও শাস্তির বিধান আরোপ করা হবে। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ও টার্নওভারের তথ্য এতোদিন নিজেদের ইচ্ছেমতো সংরক্ষণ করলেও এখন তা নিয়ন্ত্রণে আনতে যাচ্ছে এনবিআর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ভোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও রাষ্ট্রের কোষাগারে তা ঠিকমতো জমা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বুক রেজিষ্টার বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করায় অডিটে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিছু প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্স ক্যাশ মেমো (ইসিআর) বা নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করলেও তার যর্থাথতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব কারণেই নির্দিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করছে এনবিআর। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সফটওয়্যার সরবরাহ করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ এই সফটওয়্যার ব্যবহার না করলে শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। মূল্য সংযোজন কর আইনের ৩৭ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনের ওই ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিলে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের সমপরিমাণ অর্থদন্ড আরোপের বিধান রয়েছে। এছাড়া অনূন্য ২০ হাজার টাকা ও অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিতে পারবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে এনবিআরেরর একজস উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ ও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়ে আসতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার পর্যবেক্ষণ করতে পারলেই রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে। এতে কোম্পানি পর্যায়েও কমপ্লায়েন্স পরিপালন বাড়বে। তবে বিষয়টি বাস্তবায়ন একটু কষ্টসাধ্য হবে। এ জন্য সচেতনতা তৈরিতে প্রচারনার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে অভিযানও পরিচালন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিজেদের অনুমোদিত সফটওয়্যার বা কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সাধারণ আদেশের এ প্রজ্ঞাপনে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, কিভাবে ব্যবহার করবে, এনবিআরের সঙ্গে তা কিভাবে যুক্ত হবে, হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি কেমন হবে, কি কি তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে ও প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে এ সফটওয়্যার সংগ্রহ করবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে। সফটওয়্যারটির ব্যবহার পদ্ধতি ও এর বৈশিষ্ট্য বা সুবিধাদি বিস্তারিত থাকবে ওই আদেশে।

সূত্র জানায়, যে সব প্রতিষ্ঠান আগের বছর ৫ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে বা টার্নওভার দেখিয়েছে তাদের হিসাব ও দলিলাদি এনবিআর নির্ধারিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট কার্যালয় বা এনবিআর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার সিস্টেমে প্রেরণ করতে হবে এসব হিসাব। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংশি¬ষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এনবিআর পরীক্ষিত ও অনুমোদিত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এনবিআর অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা এ সফটওয়্যার কেন্দ্রীয় ডাটা বেইজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এনবিআরের নির্ধারিত সফটওয়্যারে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলেই কেবল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ভ্যাট আইন অনুযায়ী এনবিআর অনুমোদিত সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন তারা পুনরায় পরীক্ষার মাধ্যমে ওই সফটওয়্যার এনবিআরের ডাটা বেইজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন।

জানা যায়, এনবিআরের নতুন সফটওয়্যারে ৫টি ভিন্ন হারে স্বয়ংক্রিয় ভ্যাট গণনার ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালানোর জন্য ওয়াই-ফাই সংযোগ বা ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকবে। বিদ্যুৎ বিভ্রান্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে সফটওয়্যারে অতিরিক্ত ব্যাটারির পাশাপাশি থ্রিজি বা ফোরজি উপযুক্ত সিম সংযুক্ত করা হবে। সফটওয়্যার থেকে পণ্য ও সেবার বিপরীতে গ্রাহকদের যে চালান দেওয়া হবে তাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা; বিআইএন নম্বর; তারিখ ও সময়; ক্যাশিয়ারের নম্বর ও কাউন্টার নম্বর; ফিসক্যাল ডিভাইস ও মেমোরি নম্বর; পণ্যের পরিমাণ, মূল্য, ভ্যাটের হার ও পরিমাণ, ভ্যাটসহ পণ্যমূল্য উলে¬খ থাকবে। ফলে ভোক্তাদের চালান প্রদানের পর হিসাবে গড়মিল করার সুযোগ থাকবে না ব্যবসায়ীদের। একটি লেনদেনে একাধিক প্রিন্ট দেওয়ার সুযোগও থাকছে না কোনো প্রতিষ্ঠানের।

প্রসঙ্গত, ১৩ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সম্প্রতি আরেকটি সাধারণ আদেশ জারি করেছে এনবিআর।

ওই আদেশে সব ধরনের আবাসিক হোটেল, রেস্তোরা ও ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্নভান্ডার, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র,কমিউনিটি সেন্টার; অভিজাত শপিং সেন্টারের অন্তর্ভূক্ত সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ও সুপার শপ,বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান, স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের দোকানদার এবং স্বর্ণ পাইকারি বিক্রেতাদের ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কেউ ইচ্ছাকৃত ইএফডি মেশিন ব্যবহার না করলে তাতে শাস্তির বিধান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close