শাহ্জাহান সাজু

  ২৮ আগস্ট, ২০১৮

উদ্দেশ্য পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা

মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। কারণ ২০১৮-২৮ সালের মধ্যে ৩৬টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বে-মেয়াদিতে পরিণত হবে। এই ১০ বছরে ফান্ড অবসায় বা সংকোচন হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি ন্যায্যমূল্যে ফেরত পাবেন নাÑ এমন আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাছাড়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ড অবসায়ন হলে বাজার থেকে বেরিয়ে যাবে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তাই এমন আশঙ্কা দূর করতে ২০১১ সালের ধস পরবর্তী সময়ে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রেখেছিল সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি পুঁজিবাজারের মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক সংস্কারসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০১৮ সালের শুরু হতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর সূচক প্রায় এক হাজার পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। একই রকমভাবে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধন ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন। পাশাপাশি বাজারের প্রতি আগ্রহ ও আস্থা কমছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমে যেতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আশঙ্কা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে যদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো না হয়। কারণ, ২০১০ সালের পর থেকে ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড বে-মেয়াদি হয়েছে। এর মোট আকার ছিল ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরো ৪টি মিউচুয়াল ফান্ড অবলুপ্ত হয়েছে। এসব ফান্ডের আকার ৪১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, পুঁজিবাজারের নানাবিধ সংস্কার করা হলেও দেশের শিল্পায়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এ খাতের কন্ট্রিবিউশন পর্যাপ্ত নয়। কার্যত দেশের পুঁজিবাজার এখনো ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে ইকুইটি নির্ভর বাজার থেকে বের হয়ে ডেরিভেটিভস, বন্ড মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো দরকার। সংকোচনমূলক নীতির দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব তাৎক্ষণিক বোঝা না গেলেও বর্তমানে পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০০৯-২০১১ সময়ে বর্তমান সরকারের প্রণোদনায় গঠিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবসায়ন চলতি বছর থেকেই শুরু হবে। ফলে ২০২১ সালের মধ্যে বিপুল অঙ্কের মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদকাল বৃদ্ধি করলে বাজারে দুটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের সময় বাজারকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে ফান্ডগুলো যে ভূমিকা রাখে তা অব্যাহত থাকবে। এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য মার্কেট মেকার না থাকলেও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সীমিত আকারে হলেও মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করতে পারে। ফলে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পোর্টফলিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে।

সার্বিক বিষয় বিবেচনায় ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পুর্তি হবে এমন ফান্ডগুলোর প্রতিটির মেয়াদ পরবর্তী এক মেয়াদে ১০ বছর বৃদ্ধি করা যায় বলে প্রস্তাব করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পক্ষ থেকেও এই মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close