নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ আগস্ট, ২০১৮

সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা

বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণের প্রবৃদ্ধি রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছরের প্রথমার্ধে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হওয়ায় সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের নতুন এ মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি জানুয়ারি-জুলাই মেয়াদের মুদ্রানীতির মতোই ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা জানুয়ারি-জুলাই মেয়াদের মুদ্রানীতির প্রক্ষেপণের ১৫ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে বেশি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি সংযত ধরনের থাকবে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এখানে সরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম থাকার সূত্রে বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সংকুলানের সুযোগ থাকবে। বিগত বছরে ১ অংকে নেমে আসা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ২০১৯ অর্থবছরে ১২ শতাংশে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন নির্ভর করবে প্রধানত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় বজায় রাখার ওপর। অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যবহার বিলাসী অপ্রয়োজনীয় আমদানি পণ্যের জন্য না হয়ে প্রকৃত উৎপাদনমুখী, কর্মসংস্থানমুখী খাতে ব্যবহার হতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, আলোচ্য সময়ে পরিস্থিতি টেকসই বা সাসটেইনেবল করার জন্য আবশ্যিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন না করা হলে আর্থিক বাজারে আমানত ও ঋণের সুদহার চাহিদা ও জোগানভিত্তিক পরিবর্তনশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে। এতে মধ্যম আয় ও উন্নত অর্থনীতি পর্যায়ে দেশের প্রত্যাশিত উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিবান্ধব হওয়ার পরিবর্তে প্রবৃদ্ধি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।

সংস্কার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, খেলাপি ঋণজনিত ব্যয়ভারসহ ব্যাংকের সামগ্রিক পরিচালনা ব্যয়ে দ্রুত হ্রাস এনে আমানত ও ঋণ সুদ হারের ব্যবধান বা ইন্টারমেডিয়েশন স্পেডের সংকোচন করা। সরকারি সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার এবং সঙ্গে তুলনীয় মেয়াদি বন্ডের বাজার ইল্ড হার এই দুয়ের মধ্যে যৌক্তিকীকরণ করা এবং সমাগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিম্নমাত্রায় রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

মুদ্রানীতিতে বিধিবদ্ধ জমার (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নগদ জমা রাখার হার) অনুপাত বা সিআরআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল আহরণের রেপো সুদের হারও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে সিআরআর আছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। রেপো সুদের হার ৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর অর্থ সংকট কাটাতে গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত সিআরআর ও রেপোর হার কমিয়ে আনে।

গভর্নর বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, তা অর্জিত হয়নি। এ বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ জন্যই মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্য ধরেছে, তা বাস্তবায়নে সহায়তা করতেই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুলাই) মুদ্রানীতিতে তা বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়। অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist